বাইকারদের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সূমহ
আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। বরেন্দ্র ও দিয়াড় অঞ্চল হিসেবেও পরিচিত এই জেলা। এখানকার আম পৃথিবী বিখ্যাত। এছাড়াও এটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদে সমৃদ্ধ একটি জেলা। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের রাজধানী হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় নিদর্শন হিন্দু শাসন আমলে বিশেষ করে সেন বংশের শেষ রাজাদের খননকৃত দিঘী ও সুলতানী আমলে মুসলিম সুলতানদের নির্মিত মসজিদ এ অঞ্চলে দেখা যায়। এছাড়াও বৃটিশ আমলে স্থানীয় জমিদারদেরও কিছু স্থাপনা শিবগঞ্জে দেখা যায় যা ভ্রমন পিপাসুদের আকৃষ্ট করে। যানজট ও কোলাহল মুক্ত এই জেলা বাইকারদের জন্যও বেশ আকর্শনীয়। যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নত হবার কারণে এই জেলায় অনেকে বাইক নিয়ে ঘুরতে আসে। এবার আসুন এক নজরে দেখে নিই এই জেলার কিছু দর্শণীয় স্থান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম
ছোট সোনা মসজিদ
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি
দারসবাড়ী মসজিদ ও মাদ্রাসা
কোতোয়ালী দরওয়াজা
চামচিকা মসজিদ
তাহখানা কমপ্লেক্স
শাহ নেয়ামতউল্লাহর সমাধি
তিন গম্বুজ মসজিদ
বাবু ডাইং
ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ
ষাঁড়বুরুজ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কথা মনে হলে প্রথম আসে আমের কথা। এই জেলা বাংলাদেশের আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস। এই জেলার আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অধিকাংশ জমি বিভিন্ন ধরনের আমের গাছে ভরপুর থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয় শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে হচ্ছে, ফজলি, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাত, আম্রপলি, গোপালভোগ, আশ্বিনা, বোম্বাই অন্যতম । সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই জেলার আমের উন্নয়ন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গড়ে ওঠেছে আম গবেষণা কেন্দ্র। এটি মূলত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা কেন্দ্র। এই গবেষণা কেন্দ্রটি রাজশাহী-চাঁপাই হাইওয়ের পাশেই অবস্থিত। শহরের বিশ্ব রোড মোড় পার হয়েই হাতের ডান পাশেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে এটি প্রতিষ্ঠিত। আম গবেষণা কেন্দ্রের পাশেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউজ অবস্থিত। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আম সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। আম গবেষণা কেন্দ্রের মোট জমির পরিমাণ ৩০.৬ একর বা ১২.৪০ হেক্টর। এই জমির উপর রয়েছে ফলের বাগান, অফিস, গবেষণাগার, আবাসিক ভবন এবং ৬৫ জাতের প্রায় ৩০০ আমগাছ। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে আম চাষের উপর ইস্তর গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে আমের জাতিগত উন্নয়ন এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেন্দ্রের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তার সহযোগী হিসেবে আরও ৪ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রয়েছেন।
ছোট সোনা মসজিদ
ছোট সোনামসজিদ ‘সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন’ বলে খ্যাত। মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের উপরিভাগে স্থাপিত একটি শিলালিপি অনুযায়ী জানা যায় জনৈক মজলিস-ই-মাজালিস মজলিস মনসুর ওয়ালী মুহম্মদ বিন আলী কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়। শিলালিপিতে নির্মানের সঠিক তারিখ সম্বলিত অক্ষরগুলি মুছে গেছে। তবে এতে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর নামের উল্লেখ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, মসজিদটি তার রাজত্বকালের (১৪৯৪-১৫১৯) কোন এক সময় নির্মিত। পুরো মসজিদের অলংকরণে মূলত পাথর, ইট, টেরাকোটা ও টাইল ব্যবহার করা হয়েছে। এদের মাঝে পাথর খোদাই এর কাজই বেশি। মসজিদের সম্মুখভাগ, বুরুজসমূহ, দরজা প্রভৃতি অংশে পাথরের উপর অত্যন্ত মিহি কাজ রয়েছে, যেখানে লতাপাতা, গোলাপ ফুল, ঝুলন্ত শিকল, ঘণ্টা ইত্যাদি খোদাই করা আছে। খিলানগুলোতেও পাথর খোদাই এর অলংকরণ রয়েছে। ক্রেইটন ও কানিংহামের বর্ণনা থেকে জানা যায়, একসময় বাইরের দিকে পুরো মসজিদটির উপর সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল, মতান্তরে কেবল গম্বুজগুলোর ওপর। গম্বুজগুলোর অভ্যন্তরভাগ টেরাকোটা সমৃদ্ধ। প্রাচীন এই স্থাপত্যটি রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ৮৫ কিমি পশ্চিমে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৩৫ কিমি উত্তরে অবস্থিত। যারা বাইক নিয়ে এই স্থাপত্যটি দেখতে যেতে চান তাদের জন্য প্রথমেই রাজশাহী-চাঁপাই হাইওয়ে ধরে যেতে হবে। রাজশাহী শহর থেকে আপনি কোর্ট স্টেশন মোড় পার হয়ে পাবেন কাশিয়াডাঙ্গা মোড়। এরপর ২৮ কিমি সামনে গোদাগাড়ি গোল চত্তর। গোদাগাড়ি গোল চত্তরের আগেই মিলবে কসবা, হরিপুর বাজার, বিজয়নগর মোড়, রাজাবাড়ি হাট ও গোপালপুর বাজার। এখানকার মিষ্টি বেশ জনপ্রিয়। গোদাগাড়ি গোল চত্তর পার হয়ে সোজা সামনে গেলেই বাসুদেবপুর মোড় ও রাজারামপুর মোড়। সেখান থেকে ৫ কিমি সামনে গিয়ে পড়বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোড মোড়। বিশ্বরোড মোড় থেকে সোনামসজিদ ৩৫ কিমি পথ। বিশ্বরোড মোড় থেকে হাতের বাম দিকের পি টি আই বিশ্বরোড ধরে সামনে গেলে শান্তির মোড় এরপর মহানন্দা ব্রিজ ও বারঘরিয়া বাজার। এটাই সোনা মসজিদ যাবার রাস্তা। এই রাস্তার অপর নাম নওয়াবগঞ্জ-শিবগঞ্জ সড়ক। এই রাস্তায় পড়বে মহারাজপুর, রাণীহাটি বাজার, শিবগঞ্জ, কানসাট। কানসাটে রয়েছে বড় আমের বাজার। কানসাট পার হয়ে ১০ কিমি সামনে গেলেই মেইন রাস্তার ডান পাশে প্রাচীন এই স্থাপত্যটি অবস্থিত। এছাড়াও এটি বাংলার রাজধানী গৌড়-লখনৌতির ফিরোজপুর কোয়াটার্স এর তাহখানা কমপ্লেক্স থেকে অর্ধ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং সোনা মসজিদ স্থলবন্দর জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বর্তমানে সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি পার্ক গড়ে ওঠেছে। এছাড়াও মূল মসজিদের উত্তর দিকে একটি দিঘি রয়েছে, এককালে এতে বাঁধানো ঘাট ছিল।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি
ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি অবস্থিত। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বরিশালের রহিমগঞ্জ গ্রামে ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালের ৫ অক্টোবর পাকিস্তান কাকুল মিলিটারী একাডেমীতে যোগদান করেন। নিষ্ঠার সাথে প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর ১৯৬৮ সালের ২ জুন কমিশন প্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশকে ধ্বংসযজ্ঞ ও পাশবিক অত্যাচারে লিপ্ত ছিল, তখন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কারাকোরামের বন্ধুর পার্বত্য সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে শিয়ালকোট সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে পরে বাংলদেশ সীমান্তে পৌঁছেন। শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্দেশে রাজশাহী জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক হিসাবে কাজ করছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর মহানন্দা নদী অতিক্রম করে শত্রুসৈন্যদের ধ্বংস করার জন্য নবাবগঞ্জের দিকে অগ্রসর হন। ১৪ ডিসেম্বর তিনি শত্রুদের কঠিন ব্যুহ ভেদ করবার জন্য দুর্ভেদ্য অবস্থানগুলো ধ্বংস করছিলেন, যখন আর একটি মাত্র শত্রু অবস্থান বাকী থাকতেই মুখোমুখি সংঘর্ষে বাংকার চার্জে শত্রুর বুলেটের আঘাতে বাংলার এই সূর্য সৈনিক শাহাদাৎ বরণ করেন।
দারসবাড়ী মসজিদ ও মাদ্রাসা
ছোট সোনামসজিদ ও সোনা মসজিদ স্থলবন্দর জিরো পয়েন্ট এর মধ্যবর্তী স্থানে ওমরপুরের সন্নিকটে দারসবাড়ী অবস্থিত। সোনামসজিদের মত এটিও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ছোট সোনামসজিদ থেকে মাত্র ২.৫ কিমি দূরে অবস্থিত। হাইওয়ে ধরে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের দিকে যেতে বিজিবি ক্যাম্প পার হয়েই হাতের বাম দিক দিয়েই দারসবাড়ী মসজিদ রোড। এই রাস্তার মাঝেই দারসবাড়ী মসজিদ। এই রাস্তার শেষ মাথা পাগলা নদীতে গিয়ে পড়েছে। পুরুষানুক্রমে স্থানীয় জনসাধারণ এই স্থানকে ‘দারসবাড়ী’ বলে থাকেন। বর্তমানে এই স্থান পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দর্স অর্থ পাঠ। মসজিদ সংলগ্ন একটি ধবংশাবসেশ দেখে অনুমান করা যায় সম্ভবতঃ একসময় মাদ্রাসা ছিল এখানে। ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের সময় মুনশী এলাহী বখশ কর্তৃক আবিস্কৃত একটি আরবী শিলালিপি অনুযায়ী (লিপি-দৈর্ঘ্য ১১ ফুট ৩ ইঞ্চি, প্রস্থ ২ফুট ১ ইঞ্চি) ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে (হিজরী ৮৮৪) সুলতান শামস উদ্দীন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে তাঁরই আদেশক্রমে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদের পরিচয় স্বরূপ এখনও একটি মেহরাব রয়েছে। এই মসজিদের চারপার্শ্বে দেয়াল ও কয়েকটি প্রস্তর স্তম্ভের মূলদেশ ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই । এ মসজিদটিও বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যের কীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এখানে প্রাপ্ত তোগরা অক্ষরে উৎকীর্ণ ইউসুফি শাহী লিপিটি এখন কোলকাতা যাদুঘরে রক্ষিত আছে। জেনারেল ক্যানিংহাম তার নিজের ভাষাতে একে দারসবাড়ী বা কলেজ বলেছেন। এ ঐতিহাসিক কীর্তির মাত্র কয়েকগজ দূরেই ভারতীয় সীমান্ত।
কোতোয়ালী দরওয়াজা
কোতোয়ালী দরওয়াজা প্রাচীন গৌড় নগরীর রাজধানীতে প্রবেশের একটি তোরণ। প্রাচীন গৌড়ের রাজধানীতে প্রবেশ করতে হলে দক্ষিণ ‘নগর উপকন্ঠে’র অধিবাসীদের এই তোরণ অতিক্রম করতে হতো। নগরদূর্গের অধিবাসীগণের দক্ষিণমুখী পথও ছিল এটিই। এই তোরণটির উচ্চতা ৩১২ ফুট, বিস্তার ১৬ ফুট। প্রবেশপথের দৈর্ঘ্য ১৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। কোতোয়ালী দরওয়াজা নামকরণ নগর পুলিশের ফারসি প্রতিশব্দ ‘কোতওয়াল’ এর অনুকরণে করা হয়েছে। এ নগরপুলিশ (কোতওয়াল) গৌড় নগরীর দক্ষিণ দেয়াল রক্ষা করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে এটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই প্রবেশপথের মধ্যবর্তী খিলানের উচ্চতা ৯.১৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫.১০ মিটার। এই প্রবেশপথের পূর্ব ও পশ্চিমদিকে সচ্ছিদ্র প্রাচীর আছে যা দিয়ে শত্রুর ওপর গুলি বা তীর ছোড়া হতো। এর অভ্যন্তর ও বহির্ভাগ উভয় পার্শ্বের সম্মুখভাগে ক্রমঢাল বিশিষ্ট অর্ধবৃত্তাকার বুরুজ ছিল। বর্তমানে সারিবদ্ধ খরছিদ্র সম্বলিত বিশাল উত্তল পরিলেখসহ বহিস্থ বরুজের আংশিক দেখা যায়। বুরুজগুলির পার্শ্বের প্রতিরক্ষা প্রাচীর এখনও বিদ্যমান এবং তা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিম প্রাচীরটি নদী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে, আর পূর্ব প্রাচীরটি ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে কিছুদুর গিয়ে পৌছেছে। এরপর এ প্রাচীর বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তরমুখী হয়ে পুনরায় ভারতে প্রবেশ করেছে। পুরু মাটির দেয়াল দেখেই বোঝা যায়, নগরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তখন কত মজবুত ছিল। প্রবেশপথের খিলানগুলোর ভেতর ও বাহিরে উভয় পার্শ্বই কারুকার্যমন্ডিত প্যানেলে শোভিত এবং এ প্যানেলের অভ্যন্তরে আছে ঝুলন্ত মোটিফ। এসব প্যানেলের কিছু কিছু এখনও টিকে আছে। এই তোরণের উভয় পার্শ্বে ৬ ফুট বিশিষ্ট বৃত্তাকার দুটি শান্ত্রী ঘর ছিল। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্রসহ পাহারারত শান্ত্রী থাকতো। এই তোরণ ও শান্ত্রীঘর দুটিতে বিভিন্ন প্রকার লতাপাতার কারুকার্য ছিল। এই প্রবেশপথ প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন। সুলতান আলাউদ্দীন খিলজীর সমসাময়িক স্থাপত্য নিদর্শন বলে অনুমান করা হয়। ফলে এই নিদর্শনটি ১২২৯ (হিজরী ৬২৭) খ্রিস্টাব্দের কিছু পর এটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধরা হয়। প্রাচীন এই স্থাপত্যটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৩৫ কিমি উত্তরে এবং ঐতিহাসিক সোনামসজিদ থেকে মাত্র অবস্থিত
চামচিকা মসজিদ
সোনামসজিদের পাশেই শিবগঞ্জ উপজেলায় এই মসজিদ অবস্থিত। সোনামসজিদ থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটারের পথ। হাইওয়ে ধরে সোনামসজিদ জিরো পয়েন্ট পৌছে হাতের ডান দিকের রাস্তা ধরে অল্প কিছুদূর গেলেই আম বাগানের মধ্যে চামচিকা মসজিদের অবস্থান। চামচিকা মসজিদের নামকরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়না। তবে বর্তমান ভারতে অবস্থিত বড় চামচিকা মসজিদের আদলেই এটি তৈরী। দারসবাড়ী মসজিদের মতই পোড়ামাটি ইট ও কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর দেয়ালের পরিধি এত মোটা যে চৈত্র মাসের প্রচন্ড গরমে এর ভিতরে শীতল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। এর মূল গম্বুজটি অতি সুন্দর। এই মসজিদের পূর্বে ৬০ বিঘা আয়তনের খঞ্জন দিঘী নামে একটি বড় দিঘী রয়েছে যার পাড়ে সিড়ি বাঁধা ঘাট ছিল মুসল্লীদের ওজু করার জন্য। এখানকার মানুষ এই মসজিদকে খনিয়াদিঘী মসজিদ বলেও ডেকে থাকেন।
তাহখানা কমপ্লেক্স
তাহখানা পারসিয়ান শব্দ যার আভিধানিক অর্থ ঠান্ডা ভবন বা প্রাসাদ। গৌড়-লখনৌতির ফিরোজপুর এলাকায় একটি বড় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ভবন কাঠামোটি ঐতিহ্যগতভাবে তাহখানা নামে পরিচিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী তোহাখানা কমপ্লেক্স বা তোহাখানা অবস্থিত। ছোট সোনামসজিদ থেকে আধা কিলোমিটারেরও কম পথ। হাইওয়ে ধরে সোনামসজিদ আম বাজার পার হয়েই হাতের বাম দিকের রাস্তাটিই তাহখানা যাওয়ার রাস্তা। সোনামসজিদ আম বাজার গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে তাহখানা যাওয়ার রাস্তা বলে দিতে পারবে। ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায় যে এর নির্মাতা মুগল সুবাহদার শাহ সুজা (১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ)। শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে এই তোহাখানা নির্মাণ করেন। গৌড়ের মত সুপ্রাচীন স্থাপত্যকর্ম তাহখানা ছাড়া অন্যত্র তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। এর ছাদ এবং দেয়ালগুলো কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে তৈরি।মসজিদ এবং তাহখানা উভয়েই 'দাফে-উল-বালাহ' নামক জলাধারের পাশে অবস্থিত। দুটি বাধানো সিড়ি জলাধারের পানির নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। মূল প্রাসাদের উত্তর পশ্চিম দিকে আরও দুটি ভবন রয়েছে। এদের মধ্যে নিকটস্থটি হলো তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ এবং অন্যটি হলো বাঁধানো বারান্দা সহ একটি গম্বুজবিশিষ্ট সমাধি। ভবনগুলো প্রায় একই সময়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এদের একত্রে একটি কমপ্লেক্স হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ভবনটি মূলত ইট দ্বারা নির্মিত। তবে দরজার চৌকাঠের জন্য কালো পাথর এবং সমতল ছাদের জন্য কাঠের বিম ব্যবহৃত হয়েছে। ভবনটিকে পশ্চিম দিক থেকে দেখলে একতলা বলে মনে হতে পারে, তবে পূর্ব দিক থেকে দ্বিতল বলেই মনে হয়। ঘরগুলি থেকে সৃষ্ট সুড়ঙ্গপথ প্রসারিত হয়ে জলাধারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে। ভবনের পশ্চিমে একটি হাম্মাম (গোসলখানা) রয়েছে যাতে পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে অষ্টভূজাকৃতির একটি কূপ। প্রাসাদটি মূলত মুঘল স্থাপত্যের কারুকার্যের আদলে প্লাস্টার এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে। তোহাখানা কমপ্লেক্সের ভেতরে আরো নাম না জানা অনেক সমাধি দেখা যায়। যাদের পরিচয় এখনো জানা যায় নি। তবে এদেরকে হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর খাদেম বা সহচর বলে ধারনা করা হয়।
শাহ নেয়ামতউল্লাহর সমাধি ও তিন গম্বুজ মসজিদঃ
হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহর মাজার শরীফ শিবগঞ্জ উপজেলার তোহাখানা কমপ্লেক্স চত্তরের মধ্যে অবস্থিত। তোহাখানা কমপ্লেক্স চত্তরের উত্তর দিকে উঁচু ভিটের উপর দন্ডায়মান বার দরজা বিশিষ্ট চতুস্কোনায়তন তার সমাধিটি বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট ইমারত। সমাধী ভবন এর প্রত্যেক দিকে ৪৯ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং মধ্য প্রকোষ্ঠটি সারে ২১ ফুট বর্গ। প্রত্যেক দেয়ালে তিনটি করে প্রবেশ পথ সন্নিবেশিত হওয়াতে এ মাজার শরীফকে বারদুয়ারী বলা হয়। মুল কক্ষের চারদিকে গিরে রয়েছে টানা ভর্টেড বারান্দা। মুল মাজার কক্ষের চর্তুদিকে একটি দরজা বিদ্যমান। সমস্ত দরজা গুলি খিলানযুক্ত মূল কক্ষের ওয়াল ভোল্ট গম্বুজ এর ভার বহন করে। এখানে যে লিপিটি আছে তা হোসেন শাহী যুগের একটি আরবী লিপি। পরবর্তীকালে তা স্থাপন করা হয়েছে। এই সমাধি প্রাঙ্গণে আরো কয়েকজন সাধক, তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গের সমাধি রয়েছে। হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহর সমাধি প্রাঙ্গন বৃক্ষশোভিত ও ইটের প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত। প্রতিদিনই বহুলোক তার মাজার দর্শন করে কৃতার্থ হন। পহেলা মহরম হযরত শাহ নোয়ামতউল্লাহর জন্ম ও মৃত্যুর দিন বলে পরিচিত। এই দিনে প্রতিবছরই এখানে ‘উরস পালন’ করা হয়ে থাকে। এছাড়া ভাদ্র মাসের শেষ শুক্রবার এখানে অন্য একটি উরস পালন করা হয়। এ দিনই অধিকাংশ লোক এখানে জমায়েত হয়ে থাকেন।
তিন গম্বুজ মসজিদ
শিবগঞ্জ উপজেলা ফিরোজপুরস্থিত শাহ্ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) প্রতিষ্ঠিত তদীয় সমাধি সংশ্লিষ্ট তিন গম্বুজ মসজিদটি মোঘল যুগের একটি বিশিষ্ট কীর্তি। এটি তোহাখানা কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহর মাজার শরীফ সংশ্লিষ্ট মসজিদ। এতে ৩টি প্রবেশ পথ এবং ভেতরে ৩টি মেহরাব রয়েছে। মসজিদের ভেতর ও বাইরে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কারুকার্য নেই। দেয়ালে কয়েকটি তাক আছে। স্থানীয় জনসাধারণ এই মসজিদে নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করে থাকেন। এই মসজিদ সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বে সুলতান শাহ সুজা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দ্বিতল ইমারত মোঘল যুগের আর একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ইট নির্মিত ইমারতটি তোহাখানা নামে প্রসিদ্ধ। কথিত আছে বঙ্গ সুলতান শাহ সুজা তাঁর মোরশেদ হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহর উদ্দেশ্যে (রাজত্বকাল ১৬৩৯-৫৮ খ্রিঃ) শীতকালীন বসবাসের জন্য ফিরোজপুর তাপনিয়ন্ত্রণ ইমারত হিসেবে এ ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। গৌড়ের প্রাচীন কীর্তির মধ্যে এই শ্রেণীর ইমরাত এই একটিই পরিলক্ষিত হয়। কড়িকাঠের উপর খোয়া ঢালাই করে যার ছাদ ও কোঠা জমাট করা হয়েছিল। উল্লেখিত মসজিদ ও তাহখানার নিকটস্থ সরোবর দাফেউল বালাহর তীরে অবস্থিত। এই দুই ইমারত হতে দুইটি সিড়ি সরোবরের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্বতীর হতে এই ইমারত দুটোর দৃশ্যাবলী খুবই মনোরম।
বাবু ডাইং
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের লীলাভূমি পিকনিকস্পট বাবুডাইং। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর হতে এর দূরত্ব ১০ কিঃ মিঃ। সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ১৫ লাখ বাসিন্দার চিত্তবিনোদনের জন্য একমাত্র ভরসা বাবুডাইং। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে কিছুটা অবসর কাটানোর কথা উঠলেই চলে আসে বাবু ডাইংয়ের নাম। এখানে সরকারের কয়েক'শ একর খাস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। এই জমিতে উঁচু-নিচু একাধিক টিলা ও প্রাকৃতিক ঝর্ণা থাকায় প্রাকৃতিক এই মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত পর্যটক এখানে আসেন। বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় অনেক বৃক্ষের সমাহার এখানে। যা দেখে পর্যটকরা অভিভূত হয়ে যায়। কিছু কিছু টিলায় আছে আদিবাসি জনগোষ্ঠির বসবাস। বাবুডাইং-কে কেন্দ্র করে একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠার সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাবু ডাইং এলাকায় একটি ক্যান্টনমেন্ট তৈরীর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাবু ডাইং বাইকে চেপে যাওয়া অনেক সহজ। বাবু ডাইং যাবার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে প্রবেশের পূর্বেই রাজশাহী-চাঁপাই হাইওয়েতে রাজা রামপুর মোড় থেকে হাতের ডান দিকে শেহালা পাড়া যাবার রাস্তা ধরে সামনে যেতে হবে। রাজা রামপুর মোড় থেকে বাবু ডাইং ৮ কিলোমিটার পথ। চাঁপাই নবাবগঞ্জ শহর থেকে রাজশাহী আসার দিকে রাজা রামপুর মোড় থেকে হাতের বাম দিকের রাস্তা ধরতে হবে। এই রাস্তায় পড়বে জীন পুরি, পাল পাড়া, হোসেনডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল। এরপর একটু সামনে গেলেই বাবু ডাইং পিকনিক স্পট মোড়। এই মোড় থেকে ডান দিক দিয়ে একটি ছোট রাস্তা গেছে। এটাই বাবু ডাইং যাবার পথ।
ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ
ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ প্রায় ৫’শত বছরের পুরনো একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট। মসজিদের দেওয়ালের প্রস্থ ৩ ফুট। দেওয়াল অক্ষুন্ন রাখার বেস্টনীসহ এর প্রশস্থতা ৪২ ইঞ্চি। মসজিদের চার কোনায় রয়েছে ৪টি বুরুজ। গম্বুজের চুড়ায় একটি মিনার আছে। এ মসজিদের পূর্ব দেওয়ালের মধ্যে রয়েছে একটি খিলান দরজা। এ দরজার দু’ পাশে রয়েছে ইস্টক অলংকরনে সজ্জিত দুটি দরজা। কাছে থেকে দেখে মনে হবে দরজা দুটি কাঠের এবং নানা নকশা অলংকরনে সজ্জিত যা সম্প্রতি বন্ধ করা হয়েছে বলে মনে হবে। কিন্ত প্রকৃত পক্ষে দরজার যাবতীয় অলংকরন ই্টের এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ। মসজিদটি গৌড়িয়া ইট দ্বারা নির্মিত। মসজিদের ভিত্তি, দেওয়াল ও গম্বুজটি খিলানের উপরে স্থাপিত। মসজিদের ভিতর ও গম্বুজে বিচিত্র নকশা রয়েছে। মসজিদের বহিরাংশের দেওয়াল গাত্রে বিচিত্র মেরলন নকশা বিদ্যমান। ঐতিহাসিক এ মসজিদটি কখন কার আমলে বা কে নির্মান করেছিল তা অনুমান করা হয় মসজিদটির ওই সময়ের স্থাপত্য শিল্পের নির্দশনাবলীর উপর। এ মসজিদের সঠিক ইতিহাস না পাওয়া গেলেও মসজিদের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে সবাই মনে করেন এটি ৫ থেকে ৬’শ বছরের পুরনো । কেউ কেউ মনে করেন ৬/৭ শত বছর আগে এ এলাকায় আলীশাহ নামক ধর্মপরায়ন এক ব্যক্তি ধর্ম প্রচারের জন্য এসে এই গ্রামে এ মসজিদটি নির্মান করেন। আর এ কারনেই তার নামানুসারেই গ্রামের নাম আলী শাহপুর রাখা হয়। প্রাচীন এই মসজিদটির অবস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউয়িনের আলী শাহপুর গ্রামে। মসজিদটি নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এই মসজিদটি দেখার জন্য আপনাকে অবলম্বন করতে হবে চাঁপাই-গোমস্তাপুর হাইওয়ে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা শহরের ফায়ার সার্ভিসের মোড় থেকে মহানন্দা নদীর পাড় ঘেষে পশ্চিম দিক দিয়ে যে রাস্তা গেছে এটাই চাঁপাই-গোমস্তাপুর হাইওয়ে। এই রাস্তায় প্রথমেই পাবেন হার্টি কালচার সেন্টার, নয়াগোলা বাজার, পুলিশ লাইন। এরপর বালুগ্রাম মোড় হয়ে ফতেপুর বাজার। ফতেপুর বাজার একটু সামনে গিয়ে খুলসি-মুন্সি বাজার বাস স্টপ। এখান থেকে হাতের ডান দিক দিয়ে পূর্ব দিকে খুলসি-নাচোল রোড। এই রোড দিয়ে আলী শাহপুর মসজিদ মাত্র ৭ কিলোমিটার। বাইকে যেতে লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। এই রাস্তায় আকা-বাঁকা কয়েকটি মোড় পড়বে। তবে আলী শাহপুর যাবার রাস্তা বললে যে কেউ বলে দিতে পারবে। আলী শাহপুর যাবার জন্য এটিই সবচেয়ে কাছের ও সহজ রাস্তা। তবে একটি বিষয় জেনে রাখা ভাল, এলাকাবাসী আলী শাহপুর যদি না বুঝে তাহলে তাদের আলশাপুর গ্রামের মসজিদে যাব বললেও হবে। এলাকাবাসীরা জানান, স্বাধীনতার আগে মসজিদটির আসে-পাশে বনজঙ্গলে ভরা ছিল। তখন এটিকে কেউ মসজিদ হিসাবে ব্যবহার করতো না। স্বাধীনতার পর রসুল মিয়া (৭৫) নামক এক ব্যক্তি মসজিদটির সংস্কার করে তার ছেলেদের নিয়ে সর্বপ্রথম জু’মার নামাজ আদায় করেন। পরে মসজিদটি স্থায়ীভবে আরো সংস্কার ও সম্প্রসারন করা হয়। বর্তমানে ওই গ্রামের জামে মসজিদ হিসাবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
ষাঁড়বুরুজ
ষাঁড়বুরুজ বা নওদা বুরুজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে অবস্থিত বর্তমানে সর্ব প্রাচীন প্রত্নসম্পদ ও লুকায়িত ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থান। স্থানীয়ভাবে এটি ষাঁড়বুরুজ নামেও পরিচিত। রাজা লক্ষন সেনের আমলে রহনপুর বাণিজ্য নগরী হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাণিজ্যিক কারণে রহনপুরেই তিনি গড়ে তোলেন সুরম্য অট্টালিকা, যার মধ্যে মসজিদই প্রধান। ষাঁড়বুরুজ নামে খ্যাত এই বিলীন অট্টালিকাটির প্রকৃত নাম শাহ্বুরুজ। শাহ্ শব্দের অর্থ বাদশা আর বুরুজ শব্দের অর্থ অট্টালিকা বা বালাখানা। যা পরবর্তীতে লোকমুখে ষাঁড়বুরুজ নামে খ্যাতি লাভ করে। বাংলা বিজয়ী ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী এ পথে বাংলায় আগমন করেন এবং এ স্থানে কিছু সময় অবস্থান করেন। ইতিহাসে পরিচিত নদীয়া অঞ্চলটি এ স্থাপনাগুলির অঞ্চলের পাশেই অবস্থিত। যা পরবর্তীতে নওদা নামে পরিচিতি লাভ করে। বখতিয়ার খলজীর আগমনের সংবাদে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রাজা লক্ষন সেন এ স্থান থেকে নদী পথে পলায়ন করেন। সেই থেকে এটি নওদা বুরুজ নামেও পরিচিত। বর্তমানে বিলপ্তির পথে এই ঐতিহ্যবাহী নির্দশনটি সরকারী কিংবা বেসরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে একটি পূর্নাঙ্গ বিনোদন পল্লীতে বূপান্তরিত হতে পারে। ঐতিহ্যবাহী এই নির্দশনটি চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে ২৮ মাইল পশ্চিমে বাণিজ্য কেন্দ্র রহনপুরে অবস্থিত। রহনপুর যাবার জন্য আপনাকে অবলম্বন করতে হবে চাঁপাই-গোমস্তাপুর হাইওয়ে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা শহরের ফায়ার সার্ভিসের মোড় থেকে মহানন্দা নদীর পাড় ঘেষে পশ্চিম দিক দিয়ে যে রাস্তা গেছে এটাই চাঁপাই-গোমস্তাপুর হাইওয়ে। এই রাস্তায় প্রথমেই পাবেন হার্টি কালচার সেন্টার, নয়াগোলা বাজার, পুলিশ লাইন। এরপর বালুগ্রাম মোড় হয়ে ফতেপুর বাজার। এখান থেকে গোমস্তাপুর বাজার ১০ কিলোমিটার। গোমস্তাপুর আমের বাজার পার হয়ে ৬ কিলোমিটার সামনে গেলেই রহনপুর রেল স্টেশন। রহনপুর রেল স্টেশন বাজারটি দেখতে বেশ আকর্শণীয়। রহনপুর রেল স্টেশনের ঠিক উত্তরে এক কিলোমিটার গেলেই বেশ কিছু উঁচু একটি ঢিবি নজরে পড়ে। এটিই ষাঁড়বুরুজ বা নওদা বুরুজ । রহনপুর রেল স্টেশন বাজারে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই নওদা বুরুজ যাবার রাস্তা বলে দিতে পারবে।
বিঃদ্রঃ উল্লেখিত সকল দর্শনীয় স্থানসূমহ বেশ অনেকদিণের পুরোনো এবং সবগুলো জায়গা দেখারমত, তবে কিছু কিছু স্থান আপনাদের ভাল নাও লাগতে পারে, তার কারন গ্রামের আকা বাকা রাস্তায় অনেকটা সময় নষ্ট হবার সম্বাভনা অনেক বেশি। কিন্তু প্রকৃতি অনুভবের উদ্দ্যেশ্যে বের হলেতো কোন কথায় নেই। মনে রাখা ভাল, যেহেতু গ্রাম্য পরিবেশ তাই নিজের প্রোয়জন মত সকল ধরনের ব্যাবস্থা রাখাই বাঞ্ছনীয়। খাবার এবং পানি সাথে রাখা বিশেষ প্রয়োজন।
উপরে উল্লেখিত ট্রাভেল গাইড মুলত রাজশাহী হয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রবেশের যে রাস্তা সেই অনু্যায়ী তৈরী, কিন্তু চাঁপাই নবাবগঞ্জ পৌছানোর পর সেখানথেকে নিজেদের মত প্ল্যান রাইডারদের করে নিতে হবে, কোন স্থান আগে যাবেন। জেনে রাখা ভাল সবকটি স্থানই মোটামোটি কাছাকাছি দুরুত্বে, এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জ পৌছানোর পর সবমিলিয়ে ৬০-৭০ কিলো মিটারের বৃত্তাকারের ভেতরে।