চলন্ত অবস্থায় মোটরসাইকেলের সমস্যা ও তার সমাধান
নিরাপত্তা ও গতির সমন্বয়ের কথা বলতে গেলে বলতেই হয় মোটরসাইকেলের নিরাপত্তার তুলনাতে গতির পরিমান একুট বেশিই দেওয়া আছে। আর তাই নিরাপত্তার বিষয়গুলো বাইকের থেকে নিজেকেই ম্যানেজ করে নিতে হয় বেশি। থেমে থাকা বাইকে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি চোখে পড়লে তা সারিয়ে নেয়া যায় ধীরে সুস্থ্যে। কিন্তু চলন্ত অবস্থায় কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ক্ষেত্র বিশেষে জীবন-মরণের সীমারেখা হয়ে দাড়ায়। ভুল সিদ্ধান্ত বা দেরীতে সিদ্ধান্তের কারনে ঘটতে পারে বড় দূর্ঘটনা। যান্ত্রিক বাহন মোটরবাইকে যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে, চলন্ত অবস্থাতেও যদি যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখিন হতে হয় তাহলে কি করতে হবে আমরা সেই আলোচনাই করবো।
এক্সিলারেটরের তার ছিড়ে গেলে
চলন্ত অবস্থায় এক্সিলারেটর বা পিকআপের তার ছিড়ে গেলে সর্বপ্রথম কাজ লুকিং মিররে পেছনের অবস্থা দেখা নেয়া। পেছন দিক নিরাপদ থাকলে ইন্ডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে একপাশে গিয়ে গাড়ী পার্ক করা।আচমকা ব্রেক করতে যাবেন না। স্বাভাবিক নিয়মেই ব্রেক করুন।
মোটরসাইকেলে জরুরী ব্রেকিং
এক্সিলারেটর লক হয়ে গেলে
বেশ গতিতে চলা অবস্থায় পিকআপ লক হয়ে গেলে অর্থাৎ আর কমানো বা বাড়ানো না গেলে সেক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই, ডান হ্যান্ডেলবারের ইনজিন সু্ইচটি দিয়ে ইনজিন অফ করে দিন, ক্লাচ চেপে ব্রেকিং এ মনযোগ দিন একই সাথে ইনডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে বাইককে নিরাপদে একপাশে নিয়ে যান।
ক্লাচের তার ছিড়ে গেলে
চলন্ত বাইকে আচমকা ক্লাচের তার ছিড়ে গেলে খুব ভয় পাবার কিছু নেই। স্বাভাবিক স্পীড রেখে লুকিং মিররে চোখ রেখে সর্তকতার সাথে রাস্তার একপাশে চলে যান। বাইক থামাতে চাইলে পিকআপ ছেড়ে দিয়ে সতর্কতার সাথে আস্তে করে গিয়ার কমিয়ে দিতে পারেন। নিউট্রাল অবস্থায় গেলে সাবধানে ব্রেক করে থেমে যেতে পারেন। গিয়ার অবস্থায় ব্রেক করলে আচমকা স্টার্ট বন্ধ হয়ে বাইক ঝাকুনি দিয়ে থেমে যেতে পারে। এতে বাইক থেকে পড়ে যাবার ঝুকি থেকে যায়।
ব্রেকের তার ছিড়ে গেলে
যদিও বর্তমানে অধিকাংশ বাইকের সামনে ডিস্ক ব্রেক দেয়া। তবুও অনেক বাইকেই সামনের ব্রেকে কেবল বা তার রয়েছে। চলন্ত অবস্থায় সামনের ব্রেকের কেবল ছিড়ে গেলে পেছনের ব্রেক আচমকা চেপে ধরবেন না, বরং ছোট ছোট এবং বারে বারে ব্রেক ধরে বাইকের স্পীড কমিয়ে আনুন।
চেইন ছিড়ে গেলে
চলন্ত অবস্থায় চেইন ছিড়ে যাওয়া খুবই খারাপ জিনিস। নিয়মিত চেইন পরিস্কার এবং পরীক্ষা করা এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে দুরে রাখতে পারে। চেইন ছিড়ে তিনটি ঘটনা ঘটতে পারে।
১. পেছনের চাকায় চেইন আটকে চাকা লক করে দিতে পারে, তাহলে চাকা পিছলে পড়ে যাবার সম্ভবনাই বেশি
২. সামনের গিয়ারের সাথে চেইন জড়িয়ে যেতে পারে, এতে সামনের স্প্রোকের ঢাকনাটি ফেটে বাম পায়ে আঘাত লাগতে পারে
৩. কপাল ভালো থাকলে চেইন ঝুলে থাকতে পারে বা খুলে পড়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে স্পীড কমিয়ে সাবধানে ব্রেক করে নিরাপদে এক পাশে বাইক থামাতে পারেন।
মোটরসাইকেলের চেইন কিভাবে পরিস্কার করবেন?
তেল শেষ হয়ে গেলে
বাইকের তেল রিজার্ভে থাকা অবস্থায় কখনই দ্রুত গতিতে ব্যস্ত রাস্তায় চলা ঠিক নয়। কখন তেল শেষ হয়ে স্টার্ট বন্ধ হয়ে বিপদে ফেলবে তার ঠিক নেই। চলন্ত বাইকে তেল শেষ হয়ে গেলে বা রিজার্ভে চলে আসলে আচমকা স্টার্ট বন্ধ হয় না বরং দুই/একবার ইন্জিন বন্ধ হতে গিয়ে আবার চালু হয়, অভিজ্ঞ বাইকার মাত্রই বুঝতে পারেন তেল রিজার্ভে চলে এসেছে। সেক্ষেত্রে পিকআপ কমিয়ে রাস্তায় চোখ রেখে তেলের সুইচ রিজার্ভে দিয়ে দিতে হবে। আর আগে থেকেই রিজার্ভে থাকলে লুকিং মিররের পেছনে দেখে নিয়ে ইনডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে নিরাপদে একপাশে সরে গিয়ে থামতে হবে।
চাকা পাংকচার হয়ে গেলে
বাইকারদের জন্য আতংকজনক একটি শব্দ। চাকা পাংকচার হওয়া বাইক ঠেলে মেকানিকের কাছে পর্যন্ত পৌছা যে কত যন্ত্রনার তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানে না।চলন্ত অবস্থায় চাকা পাংকচার হয়ে গেলে আচমকা ব্রেক করবেন না, বিশেষ করে যে চাকা পাংকচার হয়েছে সেটি কখনই ব্রেক করবেন না। প্রথমেই স্পীড কমিয়ে দিন, আচমকা নয়, আস্তে আস্তে। যে চাকা ভালো আছে সে চাকায় সাবধানে ব্রেক করুন। হ্যান্ডেল শক্তকরে ধরে সোজা রাখবেন কেননা চাকা পাংকচার হয়ে গেলে বাইকে বেশ খানিকটা কন্ট্রোল হারাতে হয়।
হেডলাইট বন্ধ হয়ে গেলে
শহরে রাতের রাস্তায় আলো থাকে কাজেই হেড লাইট বন্ধ হলেও মারাত্বক ঘটনা নয়, কিন্তু হাইওয়ে ধরে চলন্ত বাইকে আচমকা হেডলাইট নিভে গেলে ভয় পেতেই হয়। বাল্ব কেটে গিয়ে বা যে কারনেই হোক আলো বন্ধ হয়ে গেলে পার্কিং লাইট জ্বালান, কম হলেও কিছু আলো পাবেন। বামের ইন্ডিকেটর জ্বালান, এবার ব্রেকিং মুডে গিয়ে বামে চেপে নিরাপদে পার্ক করুন।
হর্ন নষ্ট হলে
বাইরের দেশ বিষেশকরে উন্নত দেশগুলিতে হর্ন তেমন গুরুত্ত্বপূর্ন না হলেও আমাদের মত দেশগুলিতে যেখানে ট্রাফিক আইন মানা হয় না সেখানে হর্ন বেশ গুরুত্ত্বপূর্ন একটা ফীচার। আচমকা চলতি পথে হর্ন নষ্ট হলে সাবধানে নিরাপদ স্পীডে বাইক চালান, মনে রাখবেন আপনি হর্নে অভ্যস্ত তাই যত দ্রুত সম্ভব রোডসাইড মেকানিক দিয়ে হর্ন ঠিক করে নিয়ে বাইক চালান।
পরিশেষে
বিপদে নার্ভ শক্ত রাখা বিপদকে অর্ধেক মোকাবেলার করার সমতূল্য। কাজেই ঘটনা যাই হোক, ভয় না পেয়ে সম্ভাব্য মোকাবেলার পথ খুজে নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। আগে থেকেই ধারনা থাকলে বিপদ মোকাবেলা সহজ হয়। তাই সম্ভাব্য বিপদ এবং তার প্রতিকার নিয়ে পূর্বে থেকেই ধারনা রাখার বুদ্ধিমানের কাজ।