ঈদে বাইক জার্নির নিরাপত্তামূলক টিপস
বাংলাদেশে বড় ছুটি গুলোর অন্যতম ছুটি হলো দুই ঈদ। সারা বছর বিভিন্ন কাজে আমরা নিজ এলাকা বাদে ভিন্ন এলাকায় অবস্থান করলেও ঈদের সময় মায়ার টানেই যার যার এলাকায় ফিরে যাই। এই বাড়ী ফেরার ভোগান্তি কেমন যারা ভোগে না তাদের এক কথায় বোঝানো যাবে না এর কষ্ট। যতই কষ্ট হোক ঈদের সময় প্রিয়জনের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করার জন্য কম-বেশি সবাই এই ভোগান্তি হাসি মুখেই মেনে নেয়।
প্রতি বছরই ঈদের সময়ে আমাদের প্রচলিত যাতায়াতের পথ গুলো অর্থাত সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ কিংবা আকাশপথ চারটি পথেই ব্যপক যাত্রীর চাপ পড়ে। ফলে যাত্রাপথ গুলো যেমন কঠিন হয়ে যায় তেমনি ভ্রমন হয় কষ্টকর। বাসের শিডউল এলোমেলো হয়ে যায়। ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকলেও যাত্রীর চাপে দাড়িয়ে যাওয়া দূরের কথা নি:শ্বাস নেওয়াও কষ্টকর হয়ে যায়। দু:খজনকভাবে প্রতি ঈদেই লঞ্চডুবে প্রানহানীর কথা আমাদের শুনতে হয়। এমনই বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকেই বেছে নেন তার প্রিয বাহন বাইকটিকে। বাইকে চেপে পাড়ি দেন দীর্ঘপথ। স্বাধিনমতো এবং প্রায় বিড়ম্বনাহীনভাবে।
ঈদের রাস্তা অন্য যেকোনো সময়ের থেকে অনেক বেশি ব্যস্ততাপূর্ন এবং ঝুকি পূর্ন। একই সাথে দূরের পথে কিছু অতিরিক্ত সমস্যাতো থাকেই। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে সতর্কথাকলে যাত্রা হবে যেমন নিরাপদ, ঈদ হবে তেমনি আরো আনন্দময়। আসুন যেনে নেই ঈদের ভীড়ের দূরের প্রচলতি কিছু সমস্যা ও তার সমাধান।
প্রস্ততি
প্রতিদিনের চলাচলের মতো দুরের রাস্তায় ভ্রমনের হিসেব কিতেব একটু আলাদা হবেই, এটিই স্বাভাবিক। আর তাই নিরাপত্তার স্বার্থেই কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রথমে বাইকের টেকনিক্যাল দিকগুলো ভালো টেকনিশিয়ান দিয়ে চেক করিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে নিন। প্রয়োজনে ইনজিন ওয়েল বদলে নতুন ইনজিনওয়েল দিন। বাইকে পর্যাপ্ত পরিমানে ভালোমানের জ্বালানি নিন। টুলবক্সে প্রয়োজনীয় টুলস আছে কিনা চেক করে নিন। বিশেষকরে প্লাগ খোলার যন্ত্রগুলো। হেলমেট-সানগ্লাস-রেইন কোট অবশ্যই নিবেন। টায়ারের পর্যাপ্ত হাওয়া দিয়ে নিন। হর্ন, লাইট গুলো ঠিকমতো কাজ করে কিনা দেখে নিন। ব্রেকতো অবশ্যই চেক করবেন।বাইকের প্রযোজনীয় কাগজ নিতে ভুল করার প্রশ্নই উঠে না।সম্ভব হলে প্রয়োজনীয় জরুরী ঔষধ, ব্যান্ডেজ সাথে নিবেন। মোবাইলে পর্যাপ্ত চার্জ ও ব্যালেন্স রাখুন।
ঈদে বাড়ী ফিরছেন মানেই সাথে ব্যাগ থাকবে। বাইকের পেছনে ব্যগকে শক্তকরে বেধে নিবেন যেমন খুলে পড়ে না যায়। কখনই বাইকের হাতলে কিছু ঝুলিয়ে নিবেন না। আর বাইকের ব্যালেন্স নষ্ট হয এই পরিমান জিনিস বাইকে না নেয়াই উত্তম। সাথে যদি পিলিয়ন/সহযাত্রী থাকে যেমন স্ত্রী/বন্ধু বা অন্য কেউ, তাহলে তাকেও অবশ্যই হেলমেট পরাবেন।
আপনার সন্তানের জীবনের থেকে আপনার ঈদ বড় নয়, কাজেই সন্তানকে সামনে বসিয়ে ঈদের ব্যস্ত রাস্তায় বাড়ীর ফেরার কথা কল্পনা করাও উচিত নয, তবে রাস্তা যদি তেমন দূরের না হয় সেক্ষেত্রে সন্তানের মাথায় অবশ্যই হেলমেট দিবেন। তা না হলেও নিদেনপক্ষে ধুলোবালির হাত থেকে রক্ষা পেতে সানগ্লাস বা চশমা।
এটি সত্য যে রাস্তা গুলো মাঝরাতের পর থেকে বেশ খানিকটা নিরিবিলি হয় বাইক চালিয়ে অনেক আরাম কিন্তু অন্যান্য সমস্যার কথা বিবেচনা করে রাতের যাত্রা থেকে দুরে থাকাই ভালো। সম্ভব হলে সুর্য্য ওঠার ঘন্টাখানেক বা তার একটু আগে বের হলে অন্তত শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো পার হওয়া যাবে কিছুটা সহজেই। কিন্তু সবার আগে ভাবতে হবে নিরাপত্তার কথা।নিরাপত্তার ঝুকি থাকলে সুর্য্য ওঠার পরে বের হলেও চলবে। ঘুম চোখে বাইক চালাবেন না। কাইজেই সেভাবেই প্রস্ততি নিন। যাত্রা শুরুর আগে এলাট্রল জাতীয় কোনো ট্যাবলেট খাবেন না। এতে ঘুমঘুম ভাব তৈরী করে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।
দুটি জিনিস অবশ্যই মনে রাখবেন। কোন অবস্তাতেই তাড়াহুড়ো করবেন না আর সর্ব অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রাখুন।
কোন রাস্তায় কিভাবে যাবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে নিন। সেই রাস্তা সম্পর্কেও জেনে নিন। যদি রাতের রাস্তা হয় তাহলে অবশ্যই আরো ভালোভাবে জানতে হবে।
যাত্রা হলো শুরু
সৃষ্টার কর্তার নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। ঈদের সময় শহরের মধ্যে কিছুটা ভীড় থাকেই। কাজেই সাবধানের সাথে ধীরে সুস্থে শহর পাড়ি দিন। শুরুতেই স্পীড না তুলে ধীরে ধীরে স্পীড তুলবেন। ইনজিনকে কিছুটা গরম হবার সুযোগ দিন।
চলতি পথে
ঈদের রাস্তায় সবাই একটু তাড়াহুড়ো করে। বাস গুলো একটু দ্রুত চলাচল করে। কাজেই সাবধান। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। কখনই মনযোগ হারাবেন না। সামনে এবং লুকিং মিররে চোখ রাখুন। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোনো গাড়ীকে ওভারটেক করতে যাবেন না। অন্য বাইকের সাথে রেস দিতে যাবেন না। আপনি আপনার বাড়ীতে যাচ্ছেন, ক্ববরে না।
বিরতি
একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর বিরতি নিন। এতে সামান্য সময় হয়তো লাগতে পারে। কিন্তু সুবিধা অনেক। এককাপ চা খেলে আপনি চাংগা হবেন। শরীরে এনার্জি রিলোড হবে। বাইকের ইনজিন কিছুটা ঠান্ডা হবে, ফলে আপনি ইনজিনে গতি ও শক্তি পাবেন। সবচেয়ে বড়কথা আপনি মনযোগ ফিরে পাবেন।
গরু-ছাগলের হাট
এটি মুলত কোরবানীর ঈদে ঘটে থাকে। অনেক হাট বসে রাস্তার পাশে। তাদের কার্যক্রম রাস্তা পর্যন্ত চলে আসে ফলে যাতাযাতে সমস্যা হয়। বিশেষ করে রাস্তায় গোবর-মুত্র ইত্যাদির কারনে পিচ্ছিল হয়ে থাকে। যা খুবই বিপদজনক। এছাড়াও ট্রাকে করে গরু বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময়ও রাস্তায় গরুর মল-মুত্র পড়ে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকে। পুরো রাস্তাতেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। রাস্তার পাশের হাট থেকে গরু-ছাগল আচমকা দৌড়ে রাস্তায় আসতেই পারে। কাজেই স্পীড স্লো করে সতর্কতার সাথে হাটের এরিয়া পার হউন।
রাতের বেলা
পথে যদি রাত হয়ে যায় বা রাতের যাত্রা হয় তাহলে দিনের বেলা থেকে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। রাতের রাস্তায় উচু-নীচু অংশগুলো অনেক সময় বোঝা যায় না কাজেই সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অপরিচিত কাউকে লিফট দেবার প্রশ্নই উঠে না। ফাকা রাস্তায় থামবেন না, থামতে হলে কোনো জনবহুল এলাকাতে গিয়ে থামুন। বাঁকগুলো সতর্কতার সাথে পার হোন।
পরিশেষে
বিপদ এবং বিপদের ধরন বলে কয়ে আসে না। তবুও সতর্কতা বিপদের পরিমান কমিয়ে দেয় এটি প্রমানিত। তাই সতর্ক থাকতে হবে। নিয়ম মেনে চললে হয়তে ১০মিনিট পরে গিয়ে আপনি গন্তব্যে পৌছবেন কিন্তু সেটি হবে নিরাপদ। যেহেতু যাচ্ছেন প্রিয়জনদের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে, সেখানে আপনার কারনে যেন তাদের আনন্দ দু:খে পরিনত না হয়।
সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
ঈদ মোবারক।