মোটরসাইকেল চালাতে কিছু সতর্কতা
মোটরসাইকেল নয় যেনো মরন সাইকেল। অনেকেই মোটরসাইকেলকে এভাবেই বলে থাকেন। সত্যি বলতে দুই চাকার এই বাহনে গতি যেমন আছে, গতিকে নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে দুর্ঘটনাও হয় অনেক বেশি ও মারাত্বকভাবে। প্রয়োজন কিছু সতর্কতার। সতর্ক থাকলে অর্থাৎ আগে ভাগেই প্রস্তুত থাকলে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, বা দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনা যায়।
হেলমেট ব্যবহার
হেলমেট হলো বাইকারদের মুকুট। দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ হলো মাথা। দেহের অন্য অংশের চেয়ে মাথায় আঘাত লাগা সবচেয়ে খারাপ।এক্সিডেন্টে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাথায় আঘাত লাগে। মাথায় খুব সাধারণ আঘাতেও মানুষ মারা যায়।তাই হেলমেট পড়ে মাথাটা নিরাপদে রাখতে পারলে অনেক ক্ষেত্রে জীবন রক্ষা পেতে পারে।
প্রয়োজনীয় কাগজ সংগে রাখা
সবারই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাকতে হবে। গাড়ি চালানোর সময় বাইকের নিবন্ধন সনদ, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস সনদ, বীমা সনদ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনে ছোট ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন।
সেফটি গিয়ার ব্যবহার করা
হেলমেট, গ্লাভস, জুতা, হাটু-কনুই গার্ড, চেস্ট প্রটেক্টর ইত্যাদি ব্যবহার করা। রাতে রিফ্লেক্টরযুক্ত পোশাক ব্যবহার করা। আবহাওয়ার সাথে মিলিয়ে প্রয়োজনীয় পোশাক পরা যেমন শীতে গরম পোশাক, বর্ষায় রেইনকোট, গরমে সুতির কাপড় এবং রাতে উজ্বল রং এর পোশাক।
নিয়ন্ত্রিত গতি
নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চললে যে কোন সমস্যা আগেই বুঝা যায়। ফলে বড় রকমের কোন দূর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়। ৪ গিয়ারে ৪০-৫০কিমি স্পীডে বাইক চালালে বাইকের জন্য, নিজের জন্য যেমন ভালো, তেমনি তেল সাশ্রয়ীও বটে।
দুইজনের বেশি না থাকা
দুজনের বেশি বাইকে বসা যেমন বেআইনী তেমনি অনিরাপদও, সাথে বাইকের জন্য ক্ষতি, তেল খরচ বেশি।তাই দুজনের বেশি বাইকে নিবেন না। দুজন থাকলে, দুজনেই হেলমেট ব্যবহার করবেন।
মোবাইল ব্যবহার না করা
বাইক চালানো অবস্থায় মোবাইলে কথাবলা মোটেও উচিত নয়। আপনার জীবনের থেকে মোবাইলে কথা বলা বেশি গুরুত্বপূর্ন নয়। প্রয়োজনে বাইক রাস্তার একপাশে নিরাপদে পার্ক করে এরপর কথা বলুন।
ওভারটেক না করা
অপ্রয়োজনীয় ওভারটেক বিপদ ডেকে আনে। দেশে ওভারটেক করতে গিয়ে এক্সিডেন্টের ঘটনা অনেক।ওভারটেক করতে হলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে হর্ন দিয়ে ওভারটেক করুন।
রেস না খেলা
অন্য বাইকার আপনাকে ওভারটেক করে চলে গেলো আর সাথে সাথে আপনিও তাকে ওভারটেক করার জন্য রেস শুরু করলেন এটি মোটেও নিরাপদ নয়।মনে রাখবেন আপনি আপনার ব্যাপারে কেয়াররেস হলেও আপনার পরিবার আপনার জন্য কেয়ারফুল, পরিবারের স্বার্থেই রেস খেলা থেকে বিরত থাকুন।
সামনের গাড়ীর খুব কাছে না যাওয়া
কোন গাড়ীর একেবারে পেছন পেছন চলা ঠিক নয়। সামনের গাড়ী আচসকা ব্রেক করতে পারে, আবার যে কোনো দিকে বাঁক নিতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই বিপদের সম্ভবনা অনেক। বিশেষকরে বড় গাড়ীর ব্রেক সাধারন বাইকের তুলনাতে বেশ শক্তিশালী। তাই তারা যত্রদ্রুত গাড়ী থামাতে পারে একজন বাইকারের পক্ষে সেটি সম্ভব হয়ে উঠে না। মালবাহী ট্রাকের পেছনে থাকবেন না। বিশেষকরে যেগুলো খোলা অবস্থায় চলে। আচমকা কোনো মালপত্র/পন্য ইত্যাদি রাস্তায় পড়ে বিপদ ঘটাতে পারে।
পেছনের গাড়ীর খুব সামনে না থাকা
কোন গাড়ীর একেবারেই সামনে থাকবে না। প্রয়োজনে সাইড দিয়ে তাকে বের করে দিন অথবা নিজে একটু গতি তুলে দুরত্ব তৈরী করুন। গতি অবস্থায় অন্য গাড়ীর সামান্য ছোয়াতে্ও আপনার বাইক ছিটকে পড়ে যেতে পারে।
বাঁকে সর্তক থাকা
দুর্ঘটনার জন্য মোক্ষম জায়গা হলো বাঁক। বিশেষকরে যে সকল বাঁকগুলো গাছপালায় ভর্তি থাকে সেগুলো আরো মারাত্বক। সামনে থেকে কোন গাড়ী কিভাবে আসছে দেখা যায় না, রাতে অবস্থা আরো করুন হয়। তাই বাঁক নিতে সতর্ক থাকুন, স্পীড কমিয়ে ধীরসুস্থে পার হউন।
মনযোগ অন্য দিকে না দেয়া
যে কোনো ধরনের চিন্তা বা অমনযোগ থেকে বিরত থাকুন। বেশি আনন্দ বা দু:খ অবস্থাতেও বাইক চালাবেন না।
চাকার হাওয়ার প্রেশার
চাকাতে সঠিক প্রেশার রাখবেন। এতে গতি এবং ব্রেকিং দুটিই ভালো পাবেন। চাকায় বেশি হাওয়া থাকলে গতি বেশি পাবেন ব্রেকিং কমে যাবে আবার কম থাকলে গতি কমে যাবে কিন্তু ব্রেকিং বেশি পাবেন।
স্পীড ব্রেকারে সতর্কতা
শহরের ভেতরে ঘন ঘন স্পীড ব্রেকার থাকতে পারে কিন্তু সাধারনত হাইওয়েতে স্পীড ব্রেকার দেয়া হয় না, কিন্তু কোনো বাজার বা বসতী এলাকার কাছে অনেক সময় স্পীডব্রেকার দেয়া হয়। আচমকা স্পীড ব্রেকার চোখে পড়লে হার্ড ব্রেক করবেন না বরং থ্রটল কমিয়ে দিন, যদি সম্ভব হয় ছোট ছোট আকারে কয়েকটি ব্রেক করুন, স্পীড ব্রেকারের একদম কাছে চলে আসলে হ্যান্ডেল সোজা রেখে পাদানির উপরে পা রেখে সীট থেকে সামান্য উচু হয়ে দাড়িয়ে যান। বাইক লাফ দিলেও আসা করা যায় আপনি পড়ে যাবেন না।
সঠিক ভাবে লেইন পরিবর্তন করুন
বড় রাস্তায় যেকানে লেন রয়েছে সেখানে মনের সুখে এদিক ওদিক যাবার সুযোগ নেই। লেইন পরিবর্তন করতে হলে যেদিকে যাবেন লুকিং মিররে পেছনের দিক নিশ্চিন্ত হয়ে নিন, ইন্ডিকের রাইট জ্বালিয়ে সিগন্যাল দিয়ে সেদিকে চরে যান। প্রয়োজনীয় ঘন ঘন লেইন পরিবর্তন নিরাপদ নয়।
হঠাৎ ইনজিন বন্ধ হয়ে গেলে
রাস্তার মধ্যে চলন্ত অবস্থায় হঠাৎ করে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল ঘাবড়াবেন না সেলফ স্টার্টার থাকলে চলন্ত অবস্থায় ক্লাচ চেপে স্টার্ট দিয় নিন, স্টার্ট না নিলে লুকিং মিররে পেছনে দেখে ইনডিকেটর লাইট জ্বালিয়ে নিরাপদে একপাশে চলে যান। এবার স্টার্ট দেবার চেষ্টা করুন।
কোন ঘটনাই পুরাতন নয়, সব সময়েই নতুন নতুন ঘটনার জন্ম নেয়, তাই ব্যস্ত রাস্তায় বাইক চালানোর সময় বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতির সঙ্গে আপনাকে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। তাই দ্রুত তাল মেলাতে হলে আপনাকে ডান পায়ের আঙুল পেছনের ব্রেক প্যাডেলের ওপর রাখতে হবে। আর মাঝেমধ্যে আপনাকে এমন সব পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে, সে জন্য আপনার উপস্থিত বুদ্ধি আর দক্ষতার ওপরই ভরসা রাখতে হবে। নার্ভকে রাখতে হবে ঠান্ডা আর মনযোগ রাখতে হবে বাইক রাইডে