মটরবাইক স্টার্ট না নিলে কি করবেন ?
নিজের জীবনের একটি ঘটনা দিয়েই শুরু করি। শহরে থাকি। ঈদের সময়। একটা সমস্যার কারনে ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ীতে যেতে পারিনি। টার্গেট নিলাম ঈদের দিন ফজরের নামাজ পড়েই রওনা দেবো, গিয়ে ঈদের জামাত ধরবো। সেভাবেই প্রস্তুতি রাখলাম। ভোরে বাইক বের করে স্টার্ট দেই, স্টার্ট নেয় না। দীর্ঘ প্রায় আধাঘন্টা চেষ্টা করেও স্টার্ট নেয় না। এদিকে বাড়ী থেকে বাবা ফোন দিচ্ছে তাড়াতাড়ি আসার জন্য ঈদের জামাতের সময় হয়ে যাচ্ছে। টেনশনে আর বিরক্তে অবস্থা কাহিল।
এমন বিপদের মধ্য অনেককেই পড়তে হয়, অন্তত নিয়মিত বাইক যারা চালান তাদের পড়তে হয়ই। কখনও নতুন বাইকারগন কিছু জিনিস না জানার কারনেও বাইকের স্টার্ট না নেয়া সংক্রান্ত বিপদে পড়ে থাকেন। বাইক স্টার্ট না নিলে সীমিত কিছু জিনিস চেক করলেই সমস্যার সমাধান করা যায়। আসুন জেনে নেই বাইক স্টার্ট না নিলে কি করবেন?
চাবি বন্ধ থাকা
বাইক স্টার্ট দিতে চাবি দিতে হবে, মনের ভূলে একাজটি না করেও দু-চারবার কিক দেয়া হয় বা স্টার্ট সুইচে চাপ দিয়ে স্টার্টের চেষ্টা করা হয় অনেক সময়। বর্তমান সময়ে ইনজিন কিল সুইচ নামে একটি আলাদা সুইচ থাকে ডান পাশের হ্যান্ডেল বার এ। বাইকের চাবির পরে এটি দিয়েও ইনজিন বন্ধ করা যায়। অনেক সময় সেভাবে বাইক রেখে দিয়ে পরে ট্রাই করলে স্টার্ট নেয় না, চাবি দেযার পরে এটিও চেক করে দেখতে সেটি চালু অবস্থায় আছে কি না?
জ্বালানি না থাকা
লক্ষ্য করে দেখুন বাইকে পর্যাপ্ত জ্বালানি(পেট্রোল/অকটেন) আছে কি না। অনেক সময় হয়তো জ্বালানি শেষ হয়ে রিজার্ভে চলে গেলে তখন তেলের সুইচ রিজার্ভে দিতে হয়, সেদিকেও লক্ষ্য করুন।
ইনজিন ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
সাধারনত শীতের দিনে সকালে স্টার্ট দিতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটে। কখনও বাইক বৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘক্ষন ফেলে রাখলেও এমন হয়। এক্ষেত্রে বাইকের চোক টেনে স্টার্ট দিন। স্টার্টের ক্ষেত্রে সেল্ফ ব্যবহার না করে কিক দিয়ে স্টার্ট দিন, স্টার্ট হয়ে গেলে কিছুক্ষন বাইক চালু অবস্থায় রাখুন এরপর চোক বন্ধ করে দিয়ে যাত্রা শুরু করুন।
স্পার্ক প্লাগে ময়লা জমা
কমন সমস্যা। অনেক সময় স্পার্ক প্লাগে ময়লা জমে গেলে বাইকে স্টার্ট নেয় না। এমন ভোগান্তি কমবেশি সবাইকেই পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে স্পার্ক প্লাগটি খুলে পরিস্কার করে আবার লাগিয়ে স্টার্ট দিন।
মোটরসাইকেলের স্পার্ক প্লাগ কিভাবে পরিস্কার করবেন?
ইলেক্ট্রিক সমস্যা
অনেক সময় ঝাকুনি বা অন্য কারনে ইলেক্ট্রিক তারের সংযোগ খুলে যেতে পারে বা ঢিলা হয়ে যেতে পারে। প্লাগের ক্যাপটি খুলে ক্যাপের তার বের করে নিয়ে তারটি ইনজিনের কাছাকাছি রেখে কিক দিয়ে দেখতে পারেন স্পার্ক হচ্ছে কিনা, যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে কোন কারনে স্পার্ক প্লাগে বিদ্যুত আসছে না, অভিজ্ঞ মেকানিকের সাহায্য লাগবে।
ইনজিনে ঠিক মতো ফুয়েল না যাওয়া
এমন ঘটনা অনেকগুলো কারনের জন্য হতে পারে। তারমধ্যে ফুয়েলে, বা ফুয়েলের লাইনে ময়লা জমে যাওয়া একটি কারন। অনেক সময়ে এয়ারলকও হয়ে যেতে পারে। যাইহোক, ট্যাংকি থেকে কার্বুরেটর পর্যন্ত যে তেলের পাইপটি গিয়েছে, তেলের সুইচ অফ করে দিয়ে কার্বুরেটর থেকে পাইপটি টেনে খুলে তেলের লাইন চালু করে দিয়ে দেখতে পারেন তেল ঠিকমতো যাচ্ছে কি না। ফুয়েলের প্রবাহ কম হলে বা বন্ধ হয়ে থাকলে নিকটস্থ মেকানিকের সাহায্য নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
খারাপ জ্বালানি তেলের কারনে
কোন কারনে বাইকে জ্বালানি তেলের মান খারাপ হলে বা ময়লা থাকলে স্টার্ট নিতে সমস্যা। সেক্ষেত্রে ট্যাংকের সমস্ত জ্বালানি ফেলে দিয়ে নতুন জ্বালানি ভরে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। না হলে যতক্ষন এই তেল ট্যাংকিতে থাকবে ততক্ষন আপনাকে ভোগাবে, কার্বুরেটর নষ্ট করবে, ইনজিন গরম করবে। ইনজিনে ময়লা জমাবে।
ইনজিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলে, বেশি লোড চাপিয়ে বাইক চালালে বা কম গিয়ারে গাড়ী চালালে বাইকের ইনজিন গরম হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক সময়ে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সমাধান একটাই ইনজিনকে বিরতি দিন। ঠান্ডা হলে এরপর আবার স্টার্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করুন।
দীর্ঘদিন বাইক ফেলে রাখলে
দীর্ঘদিন না চালিয়ে বাইক ফেলে রাখলে স্টার্টে সমস্যা হতেই পারে। এর জন্য প্রতিদিন না হোক সপ্তাহে অন্তত ১দিন স্টার্ট দিয়ে ৫মিনিট ইনজিন চালু রাখা উচিত। এতে সব দিক দিয়েই সুবিধা। যাইহোক, দীর্ঘদিন বাইক ফেলে রাখলে প্রথম কাজ বাইকটি পরিস্কার নিন, ব্যাটারি চার্জ আছে কিনা দেখে নিন, ফুয়েল এবং ইনজিন ওয়েল পর্যাপ্ত আছে কিনা দেখে নিন। সম্ভব হলে পরিবর্তন করে নতুনভাবে দিন। স্পার্গ প্লাগে ময়রা জমলে পরিস্কার করে নিন। আর অনেকদিন পরে স্টার্ট দিতে চাইলে প্রথমেই সেলফস্টার্ট ব্যবহার না করে কিকস্টার্ট ব্যবহার করুন।
তুবও স্টার্ট না হলে?
আর গবেষনা করে বিজ্ঞানী হবার দরকার নেই, এইবার বাইক কাধে করে সোজা অভিজ্ঞ মেকানিকের চেম্বারে হাজির হোন। সমস্যার সমাধান যা করার উনিই করবেন।
পরিশেষে
ঔষধ খেয়ে রোগ সারানোর থেকে রোগ প্রতিরোধ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও কখনও কখনও সমস্যায় পড়তেই হয়। সমস্যার সমাধান নিজে করতে পারলে খুবই ভালো, যদি সন্দেহ থেকে যায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিতে হবে।