মোটরসাইকেল গ্রুপ রাইডিং টিপস

১. অভিজ্ঞ কাউকে রাইডের নেতা নির্বাচন করুন। নেতা বলুন বা ক্যাপ্টেন নাম যাই হোক, কিন্তু সবাই তার নেতৃত্বে চলবেন এই বিষয়টি নিশ্চিত করুন। টীম লিডার রাইডের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করবেন, বাকীরা তাকে সহযোগিতা করবেন। রাইডের শেষ কোথায় হবে, কোন পথে যাবেন এবং টীম লিডার পথের বিস্তারিত তথ্য মেম্বরকাছে উপস্থাপন করবেন যেনো রাইডের পুর্বেই সবাই স্বচ্ছ ধারনা পেতে পারে।
২. গ্রুপে একজন “শেষের ব্যক্তি” থাকবেন যার সাখে টীম লিডারের যোগাযোগ থাকবে। টীম লিডার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন আর শেষের ব্যক্তি পুরো গ্রুপকে পেছন থেকে নিরাপত্তা দিবেন। তার কাছে সকল মেম্বরদের ফোন নম্বর থাকবে এবং কখনও কোনো মেম্বর দুর্ঘটনা বা কোন কারনে গ্রুপ থেকে আলাদা হয়ে গেলে তিনি টীম লিডারকে তা অবহিত করবেন।
৩. সম্ভব হলে সকল রাইডার একই ধরনের বাইক ব্যবহার করুন। অর্থাৎ সিসি লিমিট যেনো প্রায় কাছাকাছি থাকে। যেমন ১০০সিসি থেকে ১২৫ সিসি অথবা ১২৫সিসি থেকে ১৫০সিসি। এতে রাইডের গতি ঠিক থাকবে। তা না হলে কম সিসির বাইককে বেগ পেতে হবে বেশি সিসির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। রাইডের পুর্বেই সবার বাইক চেক করে নিতে হবে যেন কোন সমস্যা না থাকে।
৪. গ্রুপ রাইডিং এ একসংগে অনেক রাইডার রাইড করে থাকেন, আর তাই এসব ক্ষেত্রে ওভারটেকিং করা থেকে যেমন বিরত থাকতে হবে, তেমনি এক বাইকের পেছনে আরেক বাইক চালিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি একাধিক বাইক রাইড দুর্ঘটনার কারন হয়ে দাড়ায়। এক বাইক থেকে আরেক বাইকের দুরত্বও ঠিক রাখতে হবে গতির সাথে তাল মিলিয়ে।
৫. বাঁক নিতে বা কর্নারিং এ সতর্ক থাকুন। সামনে, ডানে এবং বামে দেখে নিশ্চিত হয়ে বাঁক পার হবেন।
৬. গ্রুপে সবাই একই স্পীড রাখুন। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ স্পীডের বেপারে টীম লিডার আগেই ধারনা দিতে পারেন এবং সম্ভাব্য কোন কোন রাস্তায় স্পীড কেমন হতে পারে তা পূর্বের জানিয়ে রাখতে পারেন। স্পীডের সাথে পারস্পারিক বাইকের দুরত্ব সব সময় ঠিক রাখতে হবে, না হলে আচমকা ব্রেক এ সমষ্টিগত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৭. লুকিং মিররে নজর রাখুন। নিজের নিরাপত্তার জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অন্য সদস্যদের জন্যও। মাঝে মাঝে লুকিং মিররে তাকিয়ে পেছনের ৪-৫জন বাইকের অবস্থান এবং সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে ধারনা পেতে পারেন। পেছনে কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে বা বিপদগ্রস্থ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
৮. গ্রুপ রাইডে রাইডারের সংখ্যা বেশি হলে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে দিতে পারেন। ৫-৬ মিলে একটি চমতকার ছোট গ্রুপ হতে পারে। তারা একসাথে থাকবেন। যে কোন সমস্যায় ছোট গ্রুপটির সকল মেম্বর এক সংগে অবস্থান করবেন। রাস্তাতেও প্রতিটি ছোট গ্রুপের মাঝে পর্যাপ্ত গ্যাপ দিয়ে অবস্থান করবে। এতে রাস্তায় অন্য গাড়ীর চলাচল যেমন সহজ হবে, একই সাথে নিজেদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।
৯. গ্রুপ রাইডে অনেক সময়ে আমরা বড় যে ভুল করে থাকি তা হলো অতি আনন্দে একে অপরের কাছাকাছি এসে বাইক চালাতে থাকি। এতে দুর্ঘটনা ঘটার হার বেড়ে যায়। রাইডের একেবারে সামনের বাইক থেকে পরের বাইকের দুরত্ব বেশি রাখতে হবে, আচমকা ব্রেকে যেন পেছনের বাইক এসে সামনের বাইকের উপরে না পড়ে। সাধারনত এ ধরনের ঘটনাতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, এবং একাধিক ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দুর্ঘটনা হয়তো সম্পূর্ন রোধ করা যায় না, কিন্তু সতর্ক থাকলে ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনা যায়।
১০. আইনের প্রতি সবারই অনুগত থাকা উচিত। বাইকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সাথে নিতে হবে। আপনার আচরেনর জন্য আপনিই দায়ী, বিশেষ করে গ্রুপে স্পীডে বাইক চালানো বা ওভারটেকিং করা ইত্যাদি।
১১. অন্যের কাছে দৃশ্যমান থাকুন। এতে নিজে বিপদে পড়বেন না, অন্য বাইকারও নিরাপদ থাকবে। উজ্জল রং এর ভেস্ট পরুন, নিদেনপক্ষে কালো পোশাক পরবেন না। উজ্জল রং এর পোশাক পরুন যেন খুব সহজেই আপনাকে দেখা যায়।
১২. অজানা জায়গায় গ্রুপ রাইড দিবেন না। রাস্তার অবস্থা, এলাকার অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে না যেনে রাইডে না যাওয়াই ভালো। ভালো রাস্তা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হযেই সেই এলাকায় গ্রুপ রাইড দিন।
১৩. চেষ্টা করুন অল্প দুরুত্বে রাইড দিতে, বেশি দুরুত্বে রাইডে দুর্ঘটনার সম্ভবনা যেমন বেশি, সমস্যার জটিলতাও হয়ে ওঠে তেমনি বেশি।
১৪. রাইডের প্রতিটি সদস্যই সেফটি গিয়ার ব্যবহার করুন। এতে ছোট খাটো দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
১৫. এক্সিডেন্ট বলে কয়ে আসে না, কাজেই সকল সদস্য যেমন এব্যাপারে সতর্ক থাকবে, তেমনি যে কোনো রাইডারের হঠাৎ অসুস্থতার কথাও মাথায় রাখতে হবে। তাই সংগে ঔষধসহ “ফার্ষ্ট এইড বক্স” রাখতে হবে। যাত্রা পথে আচমকা বিপদে সম্ভাব্য সাহায্য কোথায় থেকে পাওয়া যাবে তার ধারনা রাখতে হবে।
কিছু নিয়ম হয়তো আনন্দ কমিয়ে দিবে সত্য কিন্ত সম্ভাব্য দু:খ পাওয়া থেকে বাচিয়ে দিবে। তাই অতি আনন্দ পেতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ার থেকে সামান্য নিয়মের মধ্যে থেকে সবাই নিরাপদে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
নিরাপদে থাকুন, সব সময়ে হেলমেট ব্যবহার করুন।