মোটরসাইকেল হেলমেটের প্রকারভেদ
বাইকে বসে বাইকে স্টার্ট দেবার আগেই একজন বাইকারের প্রথম কাজ মাথায় হেলমেট পরে নেওয়া। বাইকারের মাথায় হেলমেট, রাজার মাথায় মুকুটের সমতূল্য। মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ হলো তার মাথা। আর তাই দুর্ঘটনায় মাথাকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। হেলমেটের বাইরের শক্ত আবরনটির নীচেই থাকে নরম স্তর যেটি মাথার সাথে লেগে থাকে, মাথাকে রাখে সুরক্ষিত।
বাইকারদের জন্য ব্যবহৃত হেলমেটগুলো কাজ এবং ব্যবহার ভেদে কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। একেক হেলমেটের গঠন প্রনালী এবং কাজের ধরন একেক রকম। তাই হেলমেট কেনার পুর্বে ডিজাইন বা স্টাইল নয়, বরং আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী হেলমটে পছন্দ করুন।
হাফ হেলমেট
এটি অনেকটাই বাচ্চাদের স্কুল ক্যাপের মতো। মাথার উপরে বাটির মতো অংশ। সামনের দিকে সামান্য শেড থাকতে পারে। দুপাশে বেল্ট দিয়ে চিবুকের সাথে লক লাগানোর সিস্টেম থাকে। আমাদের দেশে এই ধরনের হেলমেট কাজের থেকে ট্রাফিক সার্জেন্টের মামলার হাত থেকে বাঁচার জন্য বেশি ব্যবহার হয়। বাইরের দেশে অনেক ক্রুজার এবং ভিন্টেজ চালকরা স্টাইল করে এটি ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু সব মিলিয়ে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে এই ধরনের হেলমেট ব্যবহার না করাই ভালো কেননা এটি শুধুমাত্র মাথার উপরাংশে ঘিরে থাকে। কান, থুতনি মুখ এবং চোখ অনিরাপদ অবস্থায় থাকে।
ওপেন ফেইস হেলমেট
এই ধরনের হেলমেট আমাদের দেশে অনেক প্রচলিত। সুরক্ষার বিচারে যথেষ্ট কার্যকরী। এই হেলমেটে মাথার প্রায় তিন চতুর্থাংশ ঢেকে থাকে। বাইরের দেশে সামনে কোন সুরক্ষা না থাকলেও আমাদের দেশে সামনের অংশে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ঢাকনাটির কারনে সামনে থেকে আসা ধুলো-বালি থেকে চোখ-মুখকে রক্ষা করে। শীতকালে থুতনির নীচ থেকে ঢোকা বাতাস কিছুটা কষ্ট দেয় এবং দুর্ঘটনায় থুতনির অংশকে সুরক্ষা দেয় না, যা জরুরী ছিলো।যারা নিরাপত্তার সাথে সামনে খোলামেলা চান তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন।
ফুল ফেইস হেলমেট
পরিপূর্ণ হেলমেট বলা যেতে পারে। ফুলফেইস হেলমেটের থেকে এই ধরনের হেলমেটে বাড়তি অংশ হিসেবে থুতনির সামনে প্রটেকশন থাকে। ওপেন ফেইস হেলমেটের থেকে সামনের স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ঢাকনা বা গ্লাসের সাইজ কিছুটা ছোট হয়। বাইরের শব্দ/ময়লা কম প্রবেশ করে। যদিও হেলমেটের ভেতরে বাতাস চলাচলের জন্য হেলমটের সামনে ২/১ জায়গাতে ফুটো থাকে যা খোলা বা বন্ধ করা যায়। তবুও অনেকের কাছে এটি আবদ্ধ মনে হয়। গরমে কিছুটা কষ্টও হয়, কিন্তু শীতকালে যথেষ্ঠ আরামদায়ক। পরিপূর্ন সুরক্ষা পেতে এধরনের হেলমেটই ব্যবহার করা উচিত। তবে ফুলফেইস হেলমেটে সামনের স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ঢাকনার এরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
মডিউলার হেলমেট
এটি ওপেন ফেইস এবং ফুল ফেইস হেলমেটের মিশ্রন বলা যেতে পারে। সামনে থুতনির সুরক্ষা অংশ এবং গ্লাস সহ পুরো অংশটি উপরে ভাজ করে তুলে ফেলা যেতে পারে বা খুলে ফেলা যেতে পারে। একই হেলমেটে ওপেন ফেইস এবং ফুল ফেইসের সুবিধা পাওয়া যায়। যেহেতু নীচের অংশটি ভাজ করে তুলে ফেলা যায় তাই নিরাপত্তার দিক দিয়ে ফুল ফেইসের মতো নয়, বরং কিছুটা কম।প্রয়োজনে সামনের অংশ তুলে ফেলে কিছু খাওয়া বা কথা বলা যায় সহজেই। যেটি ফুল ফেইসে সম্ভব নয়।
অফ-রোড হেলমেট
ফুল ফেইসের মতোই থুতনিতে সুরক্ষা থাকে কিন্তু সেটি আরো বর্ধিত আকারে থাকে। মাথার উপরের অংশতেও সামনে বাড়ানো একটি শেড থাকে। সাধারনতই সামনে স্বচ্ছ প্লাস্টিক বা গ্লাস থাকে না, বরং অফ রোড রাইডাররা তার পরিবর্তে বিশেষ ধরনের গগলস ব্যবহার করেন।ভেতরের অংশ তুলনামুলক কম আবদ্ধ তাকে বরং কিছুটা আরামদায়ক করা হয়। সাধারন রাস্তায় এই ধরনের হেলমটে সাধারন ব্যবহার না করাই উত্তম, কেননা সাধারন রাস্তার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এতে কম উপস্থিত।
ডুয়েল স্পোর্ট হেলমেট
ফুল ফেইস এবং অফ-রোড হেলমেট এর মিশ্রন হলো ডুয়েল স্পোর্ট হেলমেট। যারা অফরোড হেলমেট পছন্দ করেন এবং ফুল ফেইসের মতো সুবিধা চান মুলত তাদের জন্য এটি কার্যকর। ফুল ফেইসের মতো সামনে সুরক্ষা স্বচ্ছ ঢাকনা যেমন থাকে তেমনি অফ রোড হেলমেটের মতো চিবুকে এবং মাথার উপরে সামনের দিকে বর্ধিত অংশ থাকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিতে।
পরিশেষে
দু:খজনক ভাবে আমাদের দেশে হেলমেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনেক বাইকারই এখনও বুঝেন না। অনেকে নিরাপত্তার থেকে স্টাইল করতে গিয়ে ভুল হেলমেট ব্যবহার করে থাকেন। হেলমেট কিনতে গিয়েও আমরা যেনতেনো ভাবে কমদামী হেলমেট কিনি, অথচ মাথায় আঘাত মানে জীবন-মরনের প্রশ্ন। আর তাই এই ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ না করাই উত্তম। রাইডার এবং পিলিওন উভয়েরই হেলমেট ব্যবহার করা উচিত।