কোন মোটরসাইকেলে কেমন মাইলেজ পাবেন?
সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে দক্ষিন এশিয়াসহ বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করে চলেছে। আমাদের মত দেশে যেখানে ট্র্যাফিক একটা বিরাট সমস্যা এবং গ্রামের রাস্তায় চলাচল করাও একটা সমস্যা, তাই এই সমস্যা দূর করার জন্য মোটরসাইকেল অনেকটাই সহায়ক। নতুন বাইকার একটি বাইক কেনার পূর্বে এর স্পীড, ইঞ্জিন পারফরমেন্স নিয়ে ভেবে থাকেন কিন্তু সবচেয়ে তারা যে বিষয়টি নিয়ে বেশি ভাবেন সেটি হচ্ছে মাইলেজ। একটি কথা সকলের জানা উচিত যে মাইলেজটা স্থায়ী কোন বিষয় না । কোম্পানী যেটাই দাবি করুক না কেন মাইলেজের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আপনার উপরেই নির্ভর করে। প্রস্তুতকারকের অবশ্যই ভালো মাইলেজ দাবি করবে কিন্তু বিভিন্ন রাস্তা ও চালকভেদে মাইলেজে ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া যায়। মাইলেজের ব্যাপারটা আবার ইঞ্জিন সিসি, পাওয়ার, যত্ন এবং রোড কন্ডিশন এবং আরও অনেক বিষয়ের সাথে জড়িত এবং একজন রাইডারকে ভালো মাইলেজ পেতে হলে কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
আমাদের দেশের কথা বলতে গেলে সকল সেগমেন্টের বাইক থেকে ভালো মাইলেজ চায় কিন্তু অনেকেই সিসি কিংবা বাইকের ধরণ না বুঝেই বেশি মাইলেজ পাবার আশায় থাকেন। এটা অবশ্যই যে ১৫০ সিসির একটি বাইক কখনই আপনাকে ১০০ সিসির মত মাইলেজ দিবে না কারণ বাইকের ওজন,টায়ার,ইঞ্জিন পাওয়ার, গতি সব কিছু ১৫০ সিসির মত ১০০ সিসি সরবরাহ করতে পারবে না। উদাহরণস্বরূপ একটি বাইক নিয়ে বলা যাক সেটি হচ্ছে আমাদের দেশের সুখ্যাতি সম্পন্ন বাইক ইয়ামাহা এফযেডএস ১৫০ । বাইকটি ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রত্যকেটা দিক নিয়ে ব্যবহারকারী এবং ক্রেতাগণ বেশ ভালো মন্তব্য করেছেন কিন্তু তাদের একটা অভিযোগ ছিলো যে মাইলেজটা অনেক কম। তাই প্রস্তুতকারক কোম্পানী এই সমস্যা সমাধানের জন্য এফআই প্রযুক্তি নিয়ে আসেন এবং সেটা পেয়ে ব্যবহারকারী অনেক খুশি কিন্তু আরেকটি সমস্যা জন্ম নেয় সেটা হল স্পীড কমে যাওয়া। তাই আপনি যদি ভালো মাইলেজ চান তবে স্পীডের ব্যাপারটা অবশ্যই মেনে নিতে হবে যদি আপনি দুটাই একত্রে চান তবে আপনার নিজের জন্য একটি বাইক নিজেকেই বানিয়ে ফেলতে হবে।
আমরা টিম মোটরসাইকেলভ্যালী আপনাদেরকে একটা বিষয় পরিষ্কার করার জন্য, আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে মাইলেজ নিয়ে পাওয়া কিছু তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি এবং গ্রাহকরা সিসিভেদে, রাস্তাভেদে ও তাদের ব্যবহারভেদে ব্যবহারকারীর প্রাপ্ত মাইলেজ রেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আমরা একটা কথা শুরু থেকেই বলে আসছি যে কোম্পানীগুলো সব সময় একটা আদর্শ মাইলেজ দাবি করে থাকে এবং সেটা স্পেশাল পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরা হয় কিন্তু গ্রাহকেরা সেরকম মাইলেজ কখনই পাবেন না। নিচে আমাদের দেশের ব্যবহারকারীদের মাইলেজ রেঞ্জ তুলে ধরবো ।
১০০ সিসি সেগমেন্ট
আমাদের দেশে ১০০ সিসির বাইকগুলোকে বলা হয় কমিউটার মোটরসাইকেল। ব্যবহারকারীরা গড়ে ৫৫ থেকে ৭০ কিমি প্রতি লিটার মাইলেজ পেয়ে থাকেন। আমরা কখনই সঠিক মাইলেজটা বলতে পারবো না কারণ বাইকের ব্র্যান্ড, রাস্তা, ব্যবহারকারী এবং ফিচারস ভেদে মাইলেজ ভিন্ন হয় কিন্তু অধিকাংশ ব্যবহারকারী আমাদের বলেছেন যে তারা গড়ে ৫৫ থেকে ৭০ মাইলেজ পাচ্ছেন। ১০০ সিসির বাইকের পাশাপাশি কিছু ১১০ সিসির বাইক চোখে পরে এবং তাদের মাইলেজ বলতে গেলে ১০০ সিসির কাছাকাছি। যেমন বাজাজ ডিস্কোভার ১০০, হিরো আইস্মার্ট, কিওয়ে আরকেএস ১০০, টিভিএস মেট্রো ইত্যাদি।
১২৫ সিসি সেগমেন্ট
এখন আমরা দেখছি যে সিসিটা একটু বেড়েছে অর্থাৎ ১০০ থেকে ১২৫ হয়েছে তার মানে এখানে ইঞ্জিন কোয়ালিটি বাড়বে সাথে সাথে এর পারফরমেন্সও বাড়বে এবং মাইলেজ রেঞ্জটাও পরিবর্তন হবে। ব্যবহারকারীদের মতে আমাদের দেশে তারা ১২৫ সিসির বাইকগুলো থেকে গড়ে মাইলেজ পাচ্ছে ৫০-৬৫ কিমি/লিটার। যেমন বাজাজ ডিস্কোভার ১২৫, টিভিএস স্ট্রাইকার, কিওয়ে আরকেএস ১২৫ ইত্যাদি।
১৫০ সিসি সেগমেন্ট
এই সেগমেন্টে কিছু ভিন্ন ক্যাটাগরির বাইক রয়েছে এবং মাইলেজটা সেই অনুপাতে ভিন্ন এবং সেটা গ্রাহকরা মাঝে মাঝে বুঝতে পারে না। সেই কারণে তারা বাইকের প্রতি অভিযোগ নিয়ে আসে। আমাদের দেশে এই সেগমেন্টের মধ্যে বেশ কিছু ক্যাটাগরির মোটরসাইকেল দেখতে পাই এবং সেগুলো হচ্ছে-
১৫০সিসি কমিউটার
১৫০সিসি কমিউটার বাইক মাইলেজ দেয় গড়ে ৪৫-৫৫ কিমি/লিটার। যেমন হিরো এচিভার, বাজাজ পালসার ইত্যাদি।
১৫০সিসি স্পোর্টস টাইপ
১৫০ সিসির মধ্যে কিছু বাইক আছে যেগুলো স্পোর্টস দেখতে কিন্তু তাদের ফিচারসের জন্য সেগুলো স্পোর্টস না। এই ধরনের বাইক কমিউটার ১৫০ সিসির থেকে কিছুটা কম মাইলেজ সরবরাহ করে এবং সেই গড় মাইলেজটা হচ্ছে ৩৫-৪৫ কিমি/লিটার। এই বাইকের বডি কিট এবং অনেক ভালো ইঞ্জিন পারফরমেন্স রয়েছে যেটা কমিউটার বাইকের থেকে বেশি । সেই জন্য মাইলেজটাও অনেকটাই ভিন্ন। যেমন ইয়ামাহা এফজেডএস, সুজুকি জিক্সার ইত্যাদি
১৫০সিসি ক্রুজার
এটা বলতে কোন সন্দেহ নেই যে ক্রুজার বাইকগুলো অন্যান্য বাইকের থেকে একদম আলাদা । এই বাইকগুলো মূলত লং রাইডের জন্য এবং সেই কারণে ইঞ্জিন অনেক শক্তিশালী । বডি পার্টস এবং ওজন ১৫০ সিসি অন্যান্য বাইকের থেকে অনেক বেশি । তাই মাইলেজটাও ভিন্ন হবে। আমাদের দেশের ব্যবহারকারীরা বলেন যে তারা গড় মাইলেজ পান লিটারে ৩০-৩৫ কিমি। যেমন কিওয়ে সুপারলাইট, হাউজুয়ে টিআর, বাজাজ এভেন্জার ইত্যাদি।
১৫০সিসি স্পোর্টস
আমাদের দেশে বলতে গেলে একটা স্পোর্টস বাইকে যেকল বিষয় থাকা দরকার সে সকল বিষয় নাই বললেই চলে কিন্তু চেষ্টা করা হয়েছে স্পোর্টস বাইকের কাছাকাছি করার। তাই আমাদের অবশ্যই বলতে হয় যে এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও স্পীডের উপর নির্ভর করে মাইলেজের ব্যাপারটা তেমন বড় কোন বিষয় না। তাই এসকল বাইকের গড় মাইলেজ হচ্ছে ২৫-৩৫ কিমি/লিটার। যেমন ইয়ামাহা আর১৫, হোন্ডা সিবিআর, লিফান কেপিআর ইত্যাদি।
১৬০-১৬৫ সিসি সেগমেন্ট
এটা হচ্ছে আমাদের দেশের সর্বশেষ অনুমোদিত সিসি এবং বর্তমানে খুব কম মোটরসাইকেল আমাদের দেশে দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশের অবস্থা বিবেচনায় ব্যবহারকারীরা গড় মাইলেজ পায় ৩০-৩৫ কিমি/লিটার। যেমন হোন্ডা হর্নেট, টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৬০ ইত্যাদি।
স্পেশাল প্রযুক্তি অথবা স্পেশাল বাইকের উপর মাইলেজ নির্ভর করে কিন্তু সেগুলো খুব বিরল। তাই এখন আমরা বলতে পারি যে সিসি,শক্তি,ব্যাক্তিগত ব্যবহার,রাস্তার অবস্থা এবং ফিচারসের উপর মাইলেজ পরিবর্তন হয়। প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলো একটা ব্যাপার কারণ তারা মাইলেজ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন। অন্যদিকে জাপানি ব্র্যান্ডগুলো টেকসই ও পারফরমেন্সের জন্য খ্যাত কিন্তু অল্প সংখ্যক কিছু চাইনিজ মোটরসাইকেলের কিছু ভালো প্রযুক্তি ও দামটাও সহনীয় আছে। এদিকে ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেলগুলো মাইলেজের জন্য বিখ্যাত। এই আলোচনাটির মাধ্যমে আশা করা যায় গ্রাহকদের তাদের বাইকের মাইলেজের ব্যাপারটা নিয়ে ভালোভাবে বুঝবেন যে কিভাবে মাইলেজের ভিন্নতা আসে।