নতুন মোটরসাইকেল কেনার পরে করনীয়
নতুন মোটরসাইকেল কিনে চালানো শুরু করেছেন কিন্তু মনে হচ্ছে ইনজিন অনেক গরম হচ্ছে, ইনজিন থেকে অন্যরকম শব্দ হচ্ছে। চলতে চলতে হঠাৎ ইনজিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, গিয়ারটা ঠিক মতো চেইন্জ হচ্ছে না। নতুন বাইকে এ ধরনের কিছু সমস্যায় পড়তে হয় যা বৈশিষ্ট্যে ছোট কিন্তু নতুনদের কাছে বড় এবং বিরক্তিকর মনে হয়ে থাকে। সমস্যা এবং সমাধানগুলো আগে থেকেই জানা থাকা ভালো। একই সংগে নতুন বাইক কেনার পরে কিছু করনীয় কাজ থাকে যা করলে আপনার এবং আপনার বাইকের উভয়ের জন্যই মংগলজনক।
বাইকটি পরিপূর্নভাবে চেক করে নিন
নতুন মোটরসাইকেল কেনার সময় পরিপূর্নভাবে মোটরসাইকেলটি চেক করে নিন। বিশেষকরে বাহির থেকে চোখে পড়ে এমন কোথাও দাগ/ফেটে যাওয়া/ভেংগেযাওয়া ইত্যাদি রয়েছে কিনা। থাকলে সাথে সাথে জানান।
ওয়ারেন্টির নিয়মগুলো জেনে নিন
মোটরসাইকেলটির কোন যন্ত্রাংশের কতদিনের জন্য ওয়ারেন্টি রয়েছে, ওয়ারেন্টির জন্য কিকি শর্ত রয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে স্বচ্ছ ধারনা নিন।
মোটরসাইকেল ম্যানুয়ালটি পড়ে নিন
আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি অবহেলা করে যাই। অথচ ম্যানুয়েলে বর্নিত নিয়মগুলো একবার পড়ে নিলে আপনার বাইকের অনেক দরকারী তথ্যই আপনার জানা থাকবে যা আগামি দিনের অনেক ছোট-বড় ঝামেলা থেকে আপনাকে বাচিয়ে দিবে। যেমন পেট্রোল নাকি অকটেন ব্যবহার করবেন। কতদিন পরপর ইনজিন অয়েল পরিবর্তন করবেন। কোন গ্রেডের ইনজিন অয়েল ব্যবহার করবেন ইত্যাদি।
নিরাপত্তা
নতুন মোটরসাইকেল, প্রিয় সম্পদ, তাই এর নিরাপত্তার বিষয়ও সবার আগে ভাবতে হবে। ডিস্কব্রেক থাকলে ভালো মানের ডিস্কলক ব্যবহার করুন। চাইলে শিকল লক বা সিকিউরিটি এলার্মও ব্যবহার করতে পারেন।ইলেক্ট্রিনিক সিকিউরিটি ডিভাইস লাগানোর পূর্বে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে , ভালো মানের ডিভাইস না হলে অনেক সময় ডিভাইস এর কারণে বাইক এর স্টার্ট না হওয়া র মতো কিছু সমস্যা দেখা দেয় ।
মেনে চলুন ব্রেকিং পিরিয়ড
একটি মোটরসাইকেল কিনে সাথে সাথেই রেস খেলতে বা বন্ধুকে পেছনে তুলে ঘুরতে না যাওয়াই ভালো। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। একে ব্রেক-ইন পিরিয়ড বলে।
মোটরসাইকেলের ব্রেক-ইন পিরিয়ড
সঠিক সময়ে সার্ভিসিং করিয়ে নিন
কোম্পানী কর্তৃক নির্ধারিত সময়গুলোতে বাইক সার্ভিসিং করিয়ে নিয়ে ভুলবেন না। অন্তত নতুন বাইকে নির্দিষ্ট সময় পর পর সার্ভিসিং করানো খুবই জরুরী। যা বাইকের পরবর্তী সময়ে স্থায়ীত্ব এবং পারফরমেন্সে সাহায্য করে।
ইনজিন গরম হচ্ছে, কি করবো?
নতুন মোটরসাইকেলের ইনজিন গরম হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। নতুন অবস্থায় যেহেতু কিছুটা লো আরপিএম এ বাইক চালানো হয় তাই ইনজিন গরম হতেই পারে। হলেই বরং ভালো। তবে ইনজিনের তাপমাত্রা আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলে সার্ভিং সেন্টারে বিষয়টি জানাতে পারেন।
অনেক তেল খাচ্ছে, কি করবো?
নতুন মোটরসাইকেলে প্রথমদিকে একটু বেশি তেল খরচ হয়। এটি স্বাভাবিক। ব্রেক-ইন পিরিয়ড শেষ হলে অর্থাৎ ১৫০০কিমি থেকে ২০০০কিমি পর থেকে তেল খরচ স্বাভাবিক হতে থাকে। এরপরেও তেল খরচ বেশি হলে সার্ভিসিং সেন্টারের সাহায্য নিন।
কত কিলোমিটার পর পর ইনজিন অয়েল পরিবর্তন করবো?
নতুন মোটরসাইকেলে প্রথম ৩০০-৪০০কিমি পরে এরপরে ৭০০-৮০০কিমি পরে। এবং এরপরে প্রতি ৯০০-১০০০কিমি অন্তর। যদিও পরবর্তিতে সিনথেটিক ইনজিন অয়েল ব্যবহার করলে ১০০০কিমি এর পরিবর্তে ব্রান্ড অনুযায়ী আরো বেশি সময় পরে ইনজিন অয়েল পরিবর্তন করতে হয়। তবে ব্রান্ড ভেদে বিষয়টি ভিন্নতর হতে পারে। মোটরসাইকেল কেনার সময়েই সার্ভিসিং সেন্টার থেকে বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নিতে পারেন।
মোটরসাইকেল স্টার্ট নিচ্ছে না, কি করবো?
মোটরসাইকেল স্টার্ট না নেবার অনেক কারন আছে। নতুন নতুন অনেকগুলো বিষয় না জানার কারনে ছোট সমস্যাই বড় মনে হয়। স্টার্ট না নিলে দেখুন-
- চাবি অন করা আছে কিনা?
- ইনজিন কিল সুইচ থাকলে সেটি কোন পজিশনে আছে।
- নিউট্রাল লাইট জ্বলছে কিনা।
- ট্যাংকে জ্বালানি পর্যাপ্ত আছে কি না?
- জ্বালানি সুইচ অন আ্ছে কি না?
- প্লাগ পরিস্কার আছে কি না?
- প্লাগ ক্যাপ ঠিকমতো লাগানো আছে কি না?
- প্রয়োজনে চোক টেনে স্টার্ট দিন
এরপরেও স্টার্ট না নিলে টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিতে হবে।
চলতে চলতে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কি করবো?
অনেক কারনেই এই সমস্যা হতে পারে। নতুন বাইকে নতুন রাইডারদের এ বিষয়ে প্রায়ই অভিযোগ করতে দেখা যায়। সঠিকভাবে কার্বুরেটর টিউনিং না থাকা, জ্বালানিতে ময়লা থাকা, প্লাগ পরিস্কার না থাকা, এয়ারফিল্টার পরিস্কার না থাকলে এমন হতে পারে। অনেক সময় নতুন বাইকার হিসেবে গিয়ার, ক্লাস এবং পিকআপের মধ্যে সঠিক সমন্বয় না করতে পারার কারনেও স্টার্ট বন্ধ হতে পারে। সঠিকভাবে আইডল আরপিএম সেট না থাকার কারনেও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সাভিসিং সেন্টারের সাহায্য নেয়াই ভালো।
প্রতিদিনের যত্ন
কথায আছে “যত্নে রত্ন মিলে”। মোটরসাইকেল যে ব্রান্ডেরই হোক, অযত্নে নষ্ট হতে থাকে, যত্নে দীর্ঘস্থায়ীত্ব বাড়ে। তাই বাইকটিকে শুরু থেকেই যত্নে রাখুন, আশা করি সে ও আপনাকে ভালো সার্ভিস দিবে।
বাইকের ব্রেক
বাইকের ব্রেক আপনার জীবনের নিরাপত্তার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ , তাই এটার সঠিক যত্ন নিন
- ড্রাম ব্রেক এ যাতে পানি না যায় ।
- ডিস্ক ব্রেক এ বালি / কাদা লাগলে বাসায় এসে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
- ড্রাম ব্রেক এর প্যাডেল এর ফ্রি প্লে রাখুন । বেশি টাইট করলে তা হঠাৎ লক হয়ে যেতে পারে ।
- নিয়মিত সামনের ডিস্ক ব্রেক এর প্যাড এর অবস্থা চেক করুন ।
গিয়ারে সমস্যা
নতুন বাইকে গিয়ার শিফটিং নিয়ে অনেক বাইকার সমস্যায় পড়েন। গিয়ার পরিবর্তন হতে চায় না, শক্ত মনে হয় ইত্যাদি। এধরনের সমস্যাতে ক্লাচ এডজাস্ট করেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে সমস্যা বেশি মনে হলে সার্ভিসিং সেন্টারে জানাতে পারেন। তবে মাথায় রাখবেন গিয়ার শিফটিং এ স্মুথনেস আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
পরিশেষে
নতুন কিছুতে এডজাস্ট হতে সময় একটু লাগেই। এসময়টা ধৈর্য্য এবং বিচক্ষনতার সাথে পাড়ি দিলে পরবর্তিতে ভালো হয়। নতুন বাইক নিয়ে বাইকারগন সাধারনত যে সমস্যায় পড়েন তার অনেকগুলোই হয় খুবই ছোট, জানা না থাকার কারনে বড় মনে হয়। কিছু থাকে সত্যিকারেরই বাইকের সমস্যা, যা সার্ভিসিং সেন্টার থেকে সমাধান করে নেয়াই ভালো, কিছু সমস্যা থাকে যা সময়ের সাথে এমনিতেই চলে যায়।
ভালো থাকুন, হ্যাপী বাইকিং।