কোন অবস্থায় বাইক চালানো উচিত নয়?
শখে এবং প্রয়োজনে। আমাদের বাইক ব্যবহার হয় সাধারনত এই দুটি কারনেই। আর ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে বাইকের জুড়ি মেলা ভার। অন্তত আমাদের মতো দেশে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ কথা স্পস্টভাবেই বলা যায় যে বাইক আমাদের জন্য আর্দশ বাহন। বাইকে গতি বেশি নিরাপত্তা কম থাকায় সব সময়েই নিরাপত্তার কথা আগে ভাবতে হয়। যে কোন সমস্যায় দুর্ঘটনায় পতিত হলে চালককে প্রায় সব সময়েই আঘাতপ্রাপ্ত হতে হয়। তাই বাইক নিয়ে বিপদে না পড়তে হয় এমন বিষয়ে সব সময়েই সতর্ক থাকতে হবে। কিছু সময় বা কিছু অবস্থা আছে যে সময় বা অবস্থায় বাইক চালানো একজন বাইকারের জন্য কোনো মতেই উচিত নয়। এই অবস্থায় বাইক চালালে দুর্ঘটনার ঝুকি বেড়ে যায় বহুগুনে, আসুন জেনে নেই সেই সময় বা অবস্থা গুলো।
যান্ত্রিক ত্রুটি
বাইকের ক্ষুদ্র অথবা বড় কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটিকেই অবহেলা করা যাবে না। ব্রেক কম থাকা, ইনজিনে সমস্যা থাকা, যে কোনো লাইটের বাল্ব নষ্ট থাকা, লুকিং মিরর ভাংগা থাকা বা না থাকা ইত্যাদি। এইধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে বাইক চালানো মুলত জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে বাইক চালানোর মতো অবস্থা। তাই এই সকল যান্ত্রিক ত্রুটি সারাই করে তবেই বাইক ব্যবহার করা উচিত।
দৃষ্টিতে সমস্যা থাকা
চোখে দেখতে সমস্যা থাকলে, রাতে দেখতে সমস্যা হলে বা দিকভ্রমের সমস্যা থাকলে বাইক না চালানোই ভালো। নচেৎ বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়ার সম্ভবনা থেকে যায়।
মনযোগে সমস্যা
কোন কারনে যদি আপনি মানসিকে পেরেশানিতে থাকেন, মনযোগে সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই সেই মুহুর্তে
অবশ্যই বাইক চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
ফোবিয়া বা ভীতি
কেউ মাকড়শা ভয় পায়, কেউ টিকটিকি আবার কেউ তেলাপোকা। এইধরনের কোনো জিনিসের প্রতি ফোবিয়া বা ভীতি থাকলে বাইক চালানো থেকে বিরত থাকা উচিত।
শারিরীক দুর্বলতা
আপনি এমনিতেই দুর্বল হোন বা অসুস্থতার কারনে দুর্বল হোন, যে কারনেই হোক শারিরীকভাবে দুর্বল বা অবসাদগ্রস্থ হলে বাইক চালাবেন না। বাইকে চার হাত-পা সচল থাকতে হয়, দুই চোখে চারিদিকে দৃষ্টি রাখতে হয়, মাথা সচল রাখতে হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা শারিরীক শক্তির প্রয়োজনও হয়। আচমকা ব্রেক করা, বাইকের ব্যালেন্স রক্ষা করা ইত্যাদি কাজে যথেষ্ঠ শক্তির প্রয়োজন হয়। কাজেই কোন ধরনের দুর্বলতাবোধ হলে বাইক না চালানোই ভালো।
ঘুম পেলে
ঘুম পেলে বা ঘুমের ভাব হলে চোখে মুখে ঠান্ডা্ পানির ঝাপটা দিয়ে, বা চা খেয়ে ফ্রেশ লাগলে বাইক চালাতে পারেন, কিন্তু ঘুম ঘুম চোখে কোনমতেই বাইক চালানো উচিত নয়। রাস্তায় মনযোগ হারাবেন, দুর্ঘটনার সম্ভবনা অনেক।
অতি রাগ বা অতি খুশি
রাগ এবং খুশি দুটিই মানব জীবনের স্বাভাবিক বহি:প্রকাশ। কিন্তু কোন কারনে আপনি অতিরিক্ত রেগে গেলে বা অতি খুশি হলে আপনার স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ কমে যায়, ভুল হয়ে যায় হিসেব নিকেশে। এমন অবস্থায় মোটরসাইকেল চালানো মারাত্বক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
হিস্টিরিয়া বা মৃগিরোগ
মৃগিরোগ হলো এমন একটি অবস্থা যা একজন মানুষকে আচমকা নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। বেহুশ হয়ে যেতে পারে বা হাতে-পায়ে খিচুনি হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা থাকলে বাইক রাইড থেকে বিরত থাকা উচিত।
গতির নেশা এবং স্টাইল
বাইক প্রকৃতপক্ষেই তারুন্যের প্রতিক। তরুন এবং বাইক শব্দ দুটি একজনের সাথে আরেকজন মিশে আছে। আবার এদের সাথে আরো দুটি শব্দ জড়িয়ে আছে সেগুলো হলো গতি এবং স্টাইল। গতি ভালো কিন্তু সেটি মাত্রার মধ্যে অধিক গতি বিপদ নয় মৃত্যু ডেকে আনে। অনেক তরুনেরই গতির নেশায় পেয়ে বসে। বাইকে বসলেই তার হুশ থাকে না, আবার অনেক বাইকার বাইকে বসেই নিজেকে টমক্রুজ ভেবে বসেন। তার ধারনা বাইক মানেই স্টাইলের মেশিন। এই ধরনের রাইডারগন অতি গতির নেশায় এবং স্টাই্ল করতে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ে যান।
নেশাদ্রব্য
তরুন সমাজের অনেকেই বিপথগামী হয়ে নেশাদ্রব্য গ্রহন করে থাকেন। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বাইক চালিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন।তাই নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বাইক চালানো যাবে না।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়
বিভিন্ন সময়ে দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার কবলে পড়তেই হয়। যেমন ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত, কুয়াশা ইত্যাদি। এই ধরনের আবহাওয়ায় বাইক নিয়ে বের হওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে একটু সময় দিয়ে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে তখন বের হওয়াই ভালো। সময়ের চেয়ে জীবনের মুল্য সব সময়েই বেশি।
পরিশেষে
সামান্য সচেতনতা, সামান্য সতর্ক থাকা বড় বিপদ থেকে দূরে রাখে। তাই যেচে বিপদে পড়ার চেয়ে একটু সতর্ক থেকে বিপদ এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।তাই যতই প্রয়োজন হোক, নিজের জীবনের স্বার্থেই উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে বাইক চালানো থেকে বিরত থাকা উচিত।