চাইনিজ বাইক কেন কিনবেন?
আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি কথা রয়েছে, “চায়না, বেশি দিন যায় না”। আসলেই কি তাই? আসুন একটু পেছনে গিয়ে দেখি। আমাদের যাদের বয়স একটু বেশি (৩০ বছরের বেশি) এবং গ্রামে থেকেছি তারা কম বেশি সবাই জানি যে গ্রামাঞ্চলের প্রচলিত অন্যতম বাহন হলো সাইকেল। এবং সবচেয়ে আকাংখিত সাইকেল হলো “চায়না ফনিক্স ( আসল উচ্চারন ফিনিক্স) সাইকেল । চায়না ফনিক্স সাইকেল আর সব সাইকেলের থেকে দামী এবং অনেক বেশি টেকসই। চালিয়েও অনেক আরাম। কমদামী সাইকেলের মধ্যে ইন্ডিয়ান হিরো সাইকেল ছিলো। দামে কম, টেকসই কম।
সিম্ফনী মোবাইল। এই ফোন ব্যবহার করে নাই এমন লোক দেশে খুজে পাওয়া দুষ্কর। ব্রান্ড হিসেবে বাংলাদেশী কিন্তু ১০০% চাইনিজ এই ফোনটি দামের তুলনায় অনেক ফীচার এবং যথেষ্ট টেকসই বলে মার্কেটে শক্ত একটি অবস্থান তৈরী করে নিয়েছে। নকিয়ার মতো পৃথিবী মাত করা কোম্পানীকে সিমফনীর কাছে মার্কেট ছেড়ে দিতে হয়েছে।
Xiaomi(উচ্চারন সম্ভবত শাওমি)। এই চাইনিজ মোবাইলের ব্রান্ডটি এপল এবং স্যামসাং এর ঘুম হারাম করে দিয়েছে।
তাহলে কেনো চাইনিজ প্রোডাক্ট খারাপ হিসেবে আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে? এর কারন হচ্ছি আমরাই। জ্বী। চায়না থেকে দুনিয়ার অখাদ্য পন্য গুলি আমরা তুলে নিয়ে আসি দেশে বেচার জন্য। আমরা জানি, বাঙ্গালী, পন্যের মানের থেকে দামের দিকে মনযোগ আগে দিবে। কাজেই জিনিস যাই হোক, সস্তা হতে হবে।সস্তার বারো অবস্থা হবেই এটি স্বাভাবিক। আর কম দামে হরেক ডিজাইনের বাইক বাহারী নাম দিয়ে ডজন ডজন কোম্পানী চাইনিজ বাইক দেশে আনা শুরু হলো। যাদের অনেকেই অল্প দিন পরেই মার্কেট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। অনেকের বাইক আছে তো পার্টস পাওয়া যায় না। অনেকের শো রুম শুধু ঢাকাতেই আছে। আর কস্টোমার সার্ভিস সেন্টার, সেতো অনেক দূরের কথা।
তাহলে কাদেরকে বিশ্বাস করবো? প্রথমেই দেখতে হবে কারা দীর্ঘদিন থেকে মার্কেটে আছে। খারাপ পন্য নিয়ে, গ্রাহককে সন্তুষ্ট না করে ব্যবসায় কখনই দীর্ঘদিন টিকে থাকা যায় না। কাজেই কিছু পন্য রয়েছে যাদের মান দামের তুলনায় মন্দ নয় যেমন জংশেন, ডায়াং, লিফান, জারা, ডায়ূন ইত্যাদি। এসকল ব্রান্ডের সব বাইকই ভালো এমন নয়, কিন্তু এদের কিছু কিছু বাইক মার্কেটে বেশ শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। যেমন ডায়াং এর ৫০সিসি এবং ৮০ সিসি, ১০০সিসি, জংশেন এর ৮০সিসি। জারা ১০০সিসি, ডায়ুন এর ৮০সিসি, ১০০সিসি এবং ১৫০সিসি।লিফানের ১৫০ সিসি, জিয়ালিং ইত্যাদি।
এই বাইক গুলো কি মানের দিক থেকে জাপানিজ বা ইনডিয়ান ব্রান্ড এর থেকে ভালো অথবা সমান? একটি পন্যের মান বিচার করতে হলে দামটিও বিচারে আনতে হয়। এ সকল বাইকগুলো দামের দিক থেকে জাপানিজ বাইকের থেকে অনেক কম এবং ইনডিয়ান বাইকের থেকেও বেশ কম দাম। কাজেই তাদের সম মানের হবে এটি কোন মতেই সম্ভব নয় কিন্তু এটি ঠিক, একই মূল্যে আপনি চায়নিজ বাইক যত সুন্দর এবং যত আধুনিক সুবিধাযুক্ত অবস্থায় পাবেন এমন সুবিধা আপনি জাপানিজ বাইক দূরের কথা ইনডিয়ান বাইকেও পাবেন না। কিন্তু ইনডিয়ান বাইক থেকে টেকসই কিছু কম হবে এটিই স্বাভাবিক। সব ক্ষেত্রেই কম টেকসই হবে এমনও নয়। যেমন আমার পরিচিত একজন জংশেন ইডি৮০সিসি বাইকটি চালাচ্ছেন প্রায় ২৫বছর ধরে। আরেকজন ডায়াং ১০০সিসি বাইক চালাচ্ছেন ১০বছরের বেশি সময় ধরে। দুজনেই সন্তুষ্ট তাদের বাইকের প্রতি।
এটি ১০০% সত্য যে বেশি দাম দিয়েও আপনি বেশি টেকসই চাইনিজ বাইক দেশে পাবেন না। যেগুলো আছে প্রায় সবগুলোই দামে কম করতে গিয়ে মানের দিক দিয়ে কম করেছে। এগুলোর মধ্যে কিছু বাইক রয়েছে যেগুলো দাম এবং মানের দারুন সমন্বয় রয়েছে যেগুলো আপনি কিনে ব্যবহার করতে পারেন।
যে সকল ক্ষেত্রে আপনি চাইনিজ বাইকের কথা ভাবতে পারেন-
০১. সামর্থের সীমাবদ্ধতা থাকলে
০২. ১০০সিসি এর নীচে বাইক চাইলে
০৩. কম দামে স্টাইলিশ বাইক চাইলে
০৪. দেশ জুড়ে সার্ভিস সেন্টার থাকলে
০৫. সন্তুষ্ট ব্যবহারকারীর অভিমত পেলে
০৬. যখন আপনার বাজেট কম
০৭. টেকসইয়ের থেকে স্টাইল যখন বেশি প্রয়োজন
আপনি যদি জাপানিজ ব্রান্ডের বাইকের প্রতি আগ্রহী হন এবং কেনার সামর্থ্য থাকে তাহলে আপনাকে ইনডিয়ান বাইক কিনতে বলা যেমন বোকামী তেমনি আপনার সাধ্যের বাইরে গিয়ে অন্য বাইক কেনার থেকে দেখে শুনে চাইনিজ বাইক আপনি ব্যবহার করতে পারেন। কারন কোনো বাইকই ১০০% পারফেক্ট নয়, কেউ গতিতে বেশি, কেউ ডিজাইনে বেশি, কেউ তেল সাশ্রয়ী আবার কেউ আরাম দায়ক। একই বাইকে সকল সুবিধা দেয়া কখনই সম্ভব নয়। ভালোর কোনো শেষ নেই। শরবতে যত চিনি ঢালবেন শরবত ততোই মিষ্টি হবে। কাজেই আপনার বাজেটের মধ্যে আপনার পছন্দের বাইকটিই আপনার জন্য সেরা বাইক। সেটি জাপানিজ ব্রান্ড হোক, ইনডিয়ান হোক, দেশি হোক কিংবা চাইনিজ।